
অপরাধ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম কে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শরীরে মারের চিহ্ন নিয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
রোববার (২১জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টায় হাসপাতালে নাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) গভীর রাতে এক বন্ধুর বাসা থেকে সাদা-পোশাকে একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে। রোববার (২১ জুলাই) ভোরে তিনি নিজেকে রাস্তার পাশে দেখতে পান। পরে কোনো মতে একটি অটোরিকশায় করে তিনি বাসায় ফেরার পর সেখান থেকে হাসপাতালে যান।
এদিকে ছেলের খোঁজে মা মমতাজ নাহার ও বাবা বদরুল ইসলাম শনিবার (২০জুলাই) সারাদিন মিন্টো রোডে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে সামনে বসে ছিলেন। সেখানে বদরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিবি তার ছেলেকে ধরে নিয়ে এসেছে কিন্তু স্বীকার করছে না’।
বেলা সাড়ে ৩টায় মো.নাহিদ ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে তিনি তার এক বন্ধুর বাসায় ছিলেন। রাত আড়াইটা-তিনটার দিকে সাদা-পোশাকের ২০ থেকে ২৫ জন লোক ওই বাড়িতে আসেন। এসময় বন্ধুর বাসার লোকজন তাকে ডেকে তুললে তিনি ছাদে চলে যান। আগত একজন লোক ছাদে গিয়ে তার নাম-পরিচয় জানাতে চান। এই লোকেরা তার ফোন খুঁজেন কিন্তু পান না। এরপর তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। বাসার সামনে তিন-চারটি ভারী গাড়ি ছিল। নাহিদকে একটিতে তোলা হয়। তিনি বলেন, গাড়িতে তুলেই অপহরণকারীরা কাপড় দিয়ে তার চোখ বেঁধে ফেলেন।
নাহিদের ধারণা গাড়িটি ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট চলে। এরপর তাকে একটি ঘরে ঢোকানো হয়। সেই ঘরে বেশ কয়েকজন তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞেস করে। তবে কী কথা হয়েছে সেটা নাহিদ বলতে চাইছেন না। তবে অন্য কোনো সময় বলবেন বলে জানান তিনি।
নাহিদ জানান, সেসময় তিনি চার-পাঁচটি গলা শুনতে পেরেছেন। একপর্যায়ে তাকে লোহার লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। নাহিদ বলেন, আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। আমি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারা অনুমান তিনি ২৪ ঘণ্টার মতো অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। ভোর চারটা বা পাঁচটার দিকে জ্ঞান ফিরলে দেখেন, বড় রাস্তার পাশে তিনি পড়ে আছেন। সাইনবোর্ডে জলসিঁড়ি লেখা দেখে তিনি ধারণা করেন তিনি পূর্বাচল এলাকায় আছেন।পরে একটি অটোরিকশা পেয়ে বনশ্রীতিতে নিজের বাসায় যান। দুপুরে তিনি নগরের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তিহন।
নগরের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাহিদের শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে, তবে তা উদ্বেগজনক।
এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গেল কয়েকদিনে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘাত, গুলি, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব মামলায় গেল পাঁচদিনে ঢাকায় প্রায় ২০০ জনসহ সারাদেশে অন্তত ৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।