
ধর্ম ও জীবন: পবিত্র হজ পালনে গিয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফের পর সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ‘সায়ী’ করতে হয়। এটি হজ ও ওমরা পালনের অন্যতম অংশ। ইব্রাহিম (আ.), তার স্ত্রী বিবি হাজেরা ও ছেলে ইসমাইল (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গায় সায়ী করা ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় কর্তব্য। মূলত কাবা শরীফের নিকটবর্তী এ জায়গায় বিশেষ রীতিতে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকেই সায়ী বলা হয়।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে কিংবা ওমরা করবে, তার কোনো অপরাধ হবে না যে সে এগুলোর তাওয়াফ করবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কল্যাণ করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ (তার ব্যাপারে) শোকরকারী, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮)
খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও হজ পালনকালে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সায়ী করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় উপনীত হয়ে হজ্জ বা উমরা উভয় অবস্থায় সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করতেন, তার প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলতেন। তাওয়াফ শেষে দু’রাকাত সালাত (নামাজ) আদায় করে সাফা ও মারওয়ায় সায়ী করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫১৯)
অন্যদিকে, সাফা ও মারওয়ায় সায়ী করার সময় বিশেষ কিছু দোয়া পড়তে হয়। রাসুল (সা.) এর হজ পালন সম্পর্কিত একটি হাদিসে এসেছে, হাতিম ইবন ইসমাইল জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মাকামে ইবরাহীম ও বাইতুল্লাহর মাঝখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে রাসুল (সা.) হাজারে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমো খেলেন। তারপর তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত করলেন- إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ অর্থ- নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর দুটি নিদর্শনসমূহের অন্যতম (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৮) এবং আরও বললেন, আল্লাহ তা’আলা যে পাহাড়ের উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করবো। পরে রাসুল (সা.) সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন এবং তারপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ শরিফ দেখতে পেলেন। এরপর তিনি কিবলামুখী হলেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ম ঘোষণা করলেন এবং বললেন-
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহুদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহ ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।’ (বাংলায় এর অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ও শত্রু বাহিনীকে একাই পরাস্ত করেছেন।’
হাতিম ইবন ইসমাইল জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) এ দোয়া পড়লেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন- যতক্ষণ না তার পা উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন- যতক্ষণ না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়া পাহাড়ে ওঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৮২১)
বর্তমানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে কিছু অংশে সবুজ আলো চিহ্নিত আছে। এই জায়গায় পুরুষদের একটু জোরে হাঁটতে বা হালকা দৌড়াতে হয়। পুরুষদের প্রতিবার এটি করতে হয়। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এটির প্রয়োজন নেই। আর অজু অবস্থায় তাওয়াফের বিধান থাকলেও সায়ী করার সময় অজু না থাকলেও চলবে। এ ছাড়া সায়ী করার সময় প্রতিবার সাফা ও মারওয়ায় পৌঁছে উপরোক্ত বিধানগুলো পালনের পাশাপাশি দু’হাত তুলে দোয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন আলেমগণ।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |