স্বামী হারানোর শোক কাটতে না কাটতে একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ অবন্তিকাকে হারিয়ে আহাজারি থামছেই না তাহমিনা শবনমের। ‘তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মেয়েও আত্মহত্যা করে তাকে একা রেখে চলে গেল।’
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মা শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে বিলাপ করে এ কথাগুলো বলছিলেন। এ সময় তাহমিনা শবনম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আমার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ছিল। আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোরেই নিয়ে গেল! আরে তোরে নিয়ে গেল অবন্তিকা? আমি কত কষ্ট করলাম। আমি এই জন্যই কষ্ট করলাম।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। এখানে ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। ওরে ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। ওই বাসার মেয়েরা তো জানার কথা না। আমার মেয়ে এসে বলতেছে মা ওরা তো আমাকে এইভাবে মেন্টাল টর্চার করতেছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে ওর অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে। মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ আমি যেদিন চলে আসি মেয়েরা বলতেছে তোমার কী পরীক্ষা শেষ না কী পরীক্ষা শুরু হবে? তার মানে তাদেরকে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে তাকে কীভাবে টর্চার করবে।
তিনি বলেন, রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি তারপরে আঁখি, বন্যা, দ্বীন ইসলাম এ ঘটনার জন্য মূল দায়ী। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আপনারা ছেলেদেরকে জিজ্ঞেস করেন তারা কেন এমন করছে। সে তো একটা স্টুডেন্ট ভালো। ক্লাসের টপ লিস্টেড মেয়ে। তার সঙ্গে কেন এরকম করছে? বলে যে ওই আপনার মেয়ে একটা মেসেজ দিয়েছে। ওই মেসেজটা কীসের? মেসেজটা কিন্তু আমার কাছে আছে। এই মেসেজে কোনদিন কোনো জিডি হয় না, কোনো কিছু হয় না। মানে, ও ওর সঙ্গে অ্যাফেয়ার করেছে, এই কথাগুলো। এই কথাগুলো দিয়া তো কখনও জিডি হয় না।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে এবং পুলিশ শুনেছি তাদের এলাকার ভাই। পরে আমি ডিআইজিকে ফোন দিয়েছি। উনি বলেছেন,ভাবী আপনি আমাকে বলতেন আমি ব্যবস্থা নিতাম। পরে দেখলাম যে ইউনিভার্সিটিতে মোটামুটি রফাদফা, চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানকে ১০টা নাম দিয়ে আসছি আমি। চেয়ারম্যান আমার সামনেই প্রক্টরকে ফোন দিয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলল। প্রক্টর কী ব্যবস্থা নিল? আজকে একবছর ধরে আমি তো হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছি অবন্তিকার বাবাকে নিয়ে। এর মাঝে মেয়েটাকে হয়রানি করল!’
গতকার শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠিকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |