প্রচ্ছদ জাতীয় সাকিবকে হারিয়ে শোকে কাতর পুরো গ্রামের মানুষ

সাকিবকে হারিয়ে শোকে কাতর পুরো গ্রামের মানুষ

মা স্কুলশিক্ষক। বাবা ছিলেন ব্যাংকার। তাঁদের সন্তান জোবায়ের আলম সাকিব মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবেন—এমন স্বপ্নই ছিল মা–বাবার। সব স্বপ্ন নিমেষেই হারিয়ে গেছে তাঁর মৃত্যুতে। গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভোজনের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও দুই সহপাঠীর সঙ্গে অকালমৃত্যু হয়েছে তাঁর। এমন মৃত্যুতে শোকাহত পুরো গ্রামের মানুষ।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে জোবায়ের আলমের বিশাল বংশ। একটি পাড়ার প্রায় পুরোটাই জোবায়েরের আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। এ গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর মা ফজলেতুন্নেসা সেফা। আগে তাঁদেরও বাড়ি ছিল এ গ্রামেই। পরে তাঁরা রাজশাহী নগরের বাকির মোড় এলাকায় একটি চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

শহরের বাড়িতে থেকেই জোবায়ের রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। কলেজিয়েট থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে। ২০২১ সালে এখান থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন জিপিএ-৫ পেয়ে। পরে ভর্তি হন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি)। গতকাল শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের দ্বিতল বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান জোবায়েরসহ তিন শিক্ষার্থী।

দুপুরে জোবায়েরের মৃত্যুর খবর পেয়ে গাজীপুরে ছুটে যান বাবা জাহাঙ্গীর আলম, মা ফজলেতুন্নেসা সেফা আর বড় বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা। গভীর রাতে জোবায়েরের লাশ নিয়ে তাঁরা রাজশাহী শহরের বাসায় আসেন। আজ রবিবার সকাল সাতটায় এখানে জোবায়েরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর লাশ নেওয়া হয় মুরারীপুর গ্রামে।

সকালে এ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জোবায়েরের এক চাচার বাড়ির সামনে শামিয়ানা টানানো হয়েছে। সেখানে শোকাহত মা ফজলেতুন্নেসা সেফাকে নিয়ে বসে আছেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের নারীরা। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মেয়ে নাইমাতুল বলেন, এখন কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে আগ্রহী নন তাঁরা। তিনি শুধু ভাইয়ের জন্য দোয়া চান।

পাড়ায় ঢোকার প্রথম বাড়িটি জোবায়েরের চাচি শিরিফা বেগমের। তিনি বলেন, ‘এমুন সোনার ছেলে আর হয় না। কারু সাথে জোরে কথা বুইলতে জাইনতো না। এলাকাবাসী, দ্যাশ-দুনিয়া সবারই মুন খারাপ। যে ছেইলে মইলো, বাপ-মায়ের সে একটাই ছেইলে। মিয়েডাকে ডাক্তার বানাইছে বাপ-মা। এইডা নাকি ইঞ্জিনিয়ার পোহোড়ছিল।’

কথা হয় তাসনিম ফেরদৌস নামের একজনের সঙ্গে, তিনি সম্পর্কে জোবায়েরের মামা। তিনি বলেন, ‘গ্রামের রাস্তায় দোতলা বাস নিয়ে পিকনিকে যাওয়া উচিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী বিবেচনায় এটা করেছিল, তারাই ভালো জানে। দোতলা বাস না হলে এভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটত না। একটা নাকি তদন্ত কমিটি হয়েছে। পুলিশও তদন্ত করছে। এখন দেখি তদন্তে কী আসে! আমরাও জানার অপেক্ষায়।’

জোবায়েরের জানাজায় এসেছিলেন তাঁর বন্ধু সোহেল পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলাদা আলাদা স্কুলে পড়তাম। এইচএসসিতে ভর্তি আগে প্রস্তুতির সময় কোচিং করতে গিয়ে ওর সঙ্গে পরিচয়। ওর মতো ভালো ছেলে হয় না। সে খুব আন্তরিক ছিল। অন্য স্কুলে পড়লেও তার সঙ্গে তাই আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়। তার মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছি না।’

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।