আওয়ামী লীগপন্থী অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) বিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, ড্যাবসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা বলছেন, দাবি মানার জন্য কর্মবিরতি ও সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় আন্দোলন করছেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মাহমুদুল হক সরকার, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার সচিব শরিফুল ইসলাম মন্ডল, ডা. মোখলেসুর রহমান সরকার, ডা. নিখিলেন্দু গুহ রায়সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এদিকে এই কর্মসূচির কারণে হাসপাতাল কলেজের আউটডোর ও ইনডোরে শত শত রোগী ও স্বজনদের ভিড় বেড়ে যায়। ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ করে এই দুর্ভোগ মানুষের জন্য কাম্য নয়। সকাল ১১টার পর থেকে রোগী দেখার টিকিট দেওয়া শুরু করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিকৃতির চেষ্টাকারী, আওয়ামীপন্থী স্বাচিপ নেতা ডা. মাহফুজার রহমানকে অন্যত্র বদলি ও পদোন্নতি বাতিল করতে হবে। তা না হলে কর্মবিরতিসহ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানের অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। দাবি আদায়ে মঙ্গলবার থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর বর্তমান নতুন অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে সরানোর দাবিতে মঙ্গলবার হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়। দাবি না মানা হলে আগামীকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করা হবে।
এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে নতুন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন রমেকের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন তাঁরা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সময়ের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলানোর জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি ও সেই সময়ের অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডা. মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন তাঁর কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তাঁর কক্ষে বসে থাকতেন। এ নিয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আপত্তি তুললেও সেসব কথা কানে তোলেননি তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা পাঁচ বছর উপাধ্যক্ষ ও চার বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডা. মো. মাহফুজার রহমান। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
এদিকে গত রোববার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে ডা. মো. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়।
মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সচেতন রংপুরবাসীর ব্যানারে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যাকে শাস্তি দিতে বদলি করে সেই মাহফুজার রহমান কীভাবে দোসর হয়। শুধু শেখ হাসিনা সরকারের প্রশাসনের কথায় সায় না দেওয়ায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছিল। সেই চিকিৎসককে দোসর ফ্যাসিস্ট বলা, প্রতিহিংসামূলক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। রমেকের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষ পদে যোগদানে যেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা মেধার বিরুদ্ধে এক ধরনের নতুন বৈষম্য।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য দূর করতেই মেধার মূল্যায়ন করছেন। মাহফুজার রহমান তাঁর মেধা ও যোগ্যতায় রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন। সরকার তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাঁকে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি দিয়েছে। কিন্তু মাহফুজার রহমান অধ্যক্ষ হওয়ায় বিগত সরকারের আওয়ামী লীগের দোসররা সুবিধা নিতে পারবে না বলেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে তাঁকে রংপুর থেকে অন্যত্র সরানোর পাঁয়তারা করছে। মাহফুজার রহমানকে রমেকের অধ্যক্ষ পদে যোগদানের বাধা দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে। পরের দিন বুধবার নতুন অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের একটি পক্ষ এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সুূুত্রঃ independent24.tv
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |