হেড লাইন: ১৪ বছরে প্রতারণার মাধ্যমে ২৮৬ বিয়ে করে আলোচিত জাকির হোসেন বেপারি তার গ্রামে একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার জাকির বিয়ের রেকর্ড গড়লেও শেষ সময়ে পেয়েছেন শুধুই তিক্ততা। ধর্ষণ মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে তিনি গত ২০ জানুয়ারি হাসপাতালে মারা যান। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ কালবেলাকে বলেন, আসামি জাকিরকে অন্য কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যান তিনি। কারাবিধি অনুযায়ী পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাকিরের গ্রামের বাড়ি গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত পনির হোসেন বেপারির ছোট ছেলে জাকির হোসেন এলাকায় একজন দানশীল ও মার্জিত স্বভাবের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঢাকায় গিয়ে নাম পরিবর্তন করে জাকির হোসেন রাব্বি হয়ে যান। রাজধানীর বড় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং বিভিন্ন স্থানে নিজেকে উচ্চশিক্ষিত বলে পরিচয় দিতেন তিনি। ঈদ ও শীতকালে এলাকায় এসে খাদ্যসামগ্রী আর শীতবস্ত্র বিতরণ করতেন। গ্রামের অভাবী মানুষকে অর্থ সহায়তা করতেন। জাকিরের বহু বিয়ের আড়ালে আসল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ আয় করা। ওই অর্থ দিয়েই গ্রামের দোচালা টিনের ঘর থেকে গড়ে তোলেন পাকা বাড়ি। বোনদের বিয়ে দিয়েছেন ভালো ঘর দেখে। সম্প্রতি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে ছোটবোনের বিয়ে দেন জাকির। তার বহু বিয়ের খবর এলাকাবাসীর অনেকেই জানেন না।
স্বজনরা জানান, তাদের কাছে জাকিরের তিনটি বিয়ের খবর আছে। প্রায় ১৪ বছর আগে বাবা পনির হোসেন মারা যান। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে জাকির ছিলেন সবার ছোট। জানা যায়, ১৪ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা জাকির এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকায় চলে যান। এরপর শুরু হয় তার কৌশলী জীবন। সুদর্শন জাকির নিজেকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে নারীদের আকৃষ্ট করে বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতেন। আবার নতুন স্থানে গিয়ে পরিচয় গোপন রেখে আবারও বিয়ে করতেন।গত ২০১৯ সালে রাজধানীর মিরপুরের এক নারীর ধর্ষণ মামলায় জাকিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই থেকে জেলেই ছিলেন তিনি। পরে একাধিক নারীর মামলায় তাকে রিমান্ডে নিলে জবানবন্দিতে ১৪ বছরে ২৮৬টি বিয়ে করার কথা স্বীকার করেন তিনি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ খবর চলে এলে প্রকাশ পায় জাকিরের আসল পরিচয়। তার প্রতিবেশী হিরণ প্রামাণিক জানান, জাকিরকে আমরা গ্রামবাসী ভালো মানুষ হিসেবেই জানি। মাঝেমধ্যে এলাকায় এসে গরিব মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তার আত্মীয় স্থানীয় ইউপি সদস্য মেহেরুল ইসলাম জানান, আমরা তার তিনটি বিয়ের খবর জানি। তিনি যে এত বিয়ে করেছেন, আমরা জানি না। গত ১৮ জানুয়ারি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে জাকিরকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানেই ২০ জানুয়ারি মারা যান তিনি। এরপর গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |