জাতীয়: দেশের ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে ১৮টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন রাখতে পারবে না। ইতোমধ্যে এই ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে মূলধন। মূলধনের ঘাটতি থাকার অর্থ হলো, সম্পদের মান ভালো নয়। এই ধরনের ব্যাংকগুলোকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের চাপে আছে। ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাত ন্যূনতম সিআরএআর সংরক্ষণ করতে পারবে না। অন্যান্য ছোটখাটো ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকিং খাত কিছুটা সক্ষম হলেও সুদহার বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করা এই খাতের জন্য কঠিন হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ বাড়লে দেশের পাঁচটি ব্যাংকের পক্ষে ন্যূনতম ১০ শতাংশ সিআরএআর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।
প্রতিবেদনে ঝুঁকির দুটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, একটি হলো বাজারের কার্যকারণজনিত ঝুঁকি; দ্বিতীয়ত, ঋণজনিত ঝুঁকি।
এতে আরও বলা হয়েছে, জুন শেষে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংক ১০ শতাংশ ন্যূনতম ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত (সিআরএআর) সংরক্ষণ করতে পারেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাকি ৫০টি ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলা করে ন্যূনতম সিআরএআর সংরক্ষণ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটসের ১০ শতাংশ সংরক্ষিত মূলধন হিসেবে রাখতে হয়। কোনও ব্যাংক নির্ধারিত এই পরিমাণ সংরক্ষণ করতে না পারলে, তা ওই ব্যাংকের মূলধনের ঘাটতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রতিবেদনে সম্মিলিতভাবে দুটি ঝুঁকি আমলে নিয়ে দেখা গেছে, ১২টি ব্যাংকের পক্ষে ন্যূনতম সিআরএআর বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, জুন শেষে খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ বাড়লে ব্যাংক খাতের সিআরএআর ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। মার্চ শেষে যা হতে পারতো ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে জুন শেষে ব্যাংক খাতের সিআরএআর ৭ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমে আসতে পারতো; মার্চ শেষে যা হতে পারতো ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এ ছাড়া বাজার ঝুঁকির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সুদহার ১ শতাংশ পরিবর্তিত হলে জুন শেষে ব্যাংক খাতের সিআরএআর ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে আসতে পারতো। মুদ্রার বিনিময় হার ৫ শতাংশ পরিবর্তিত হলে তা হতে পারতো ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ইকুইটির মূল্য ১০ শতাংশ কমলে তা হতে পারতো ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
ঋণজনিত ঝুঁকি ও বাজার ঝুঁকির সম্মিলিত ফল হলো, জুন শেষে ব্যাংক খাতের সিআরএআর ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং মার্চ শেষে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ হতে পারতো। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মার্চের তুলনায় জুনে ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতের সংরক্ষিত সামগ্রিক সিআরএআরের পরিমাণ কমেছে। এই প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের সিআরএআর ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ; চলতি বছরের মার্চ শেষে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তারপরও ন্যূনতম হার ১০ শতাংশের চেয়ে তা বেশি।
জুন শেষে ২২টি ব্যাংকের সংরক্ষিত সিআরএআর ছিল ১৫ শতাংশের নিচে। ব্যাংক খাতের ৫৫ দশমিক ৮২ শতাংশ সম্পদ তাদের হাতে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশের বেশি সিআরএআর ছিল ২৮টি ব্যাংকের। এতে হাতে ছিল মোট সম্পদের ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |