প্রচ্ছদ জাতীয় ১৫ সেনা কর্মকর্তার মামলায় নাটকীয় মোড়, পিছু হটলেন আইনজীবী, কি হতে যাচ্ছে?

১৫ সেনা কর্মকর্তার মামলায় নাটকীয় মোড়, পিছু হটলেন আইনজীবী, কি হতে যাচ্ছে?

মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গুমকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ১৫ সেনা কর্মকর্তার মামলায় নতুন মোড় এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের পক্ষে লড়াই করা আইনজীবী *ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন* হঠাৎ করেই এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত—তা ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে গুম, খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ অধ্যায় রচিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য এসব নির্মম কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। “ক্রসফায়ার” নামে মানুষ হত্যা, “আয়নাঘর” নামে পরিচিত গোপন স্থানে আটক রেখে নির্যাতন, এমনকি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটে।
একসময় যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর গর্ব, সময়ের পরিক্রমায় তাঁরাই হয়ে ওঠেন আতঙ্কের প্রতীক। আজ সেই ১৫ সেনা কর্মকর্তা মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ তিনটি মামলায় গ্রেফতার ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়ছিলেন ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার সরোয়ার ঘোষণা দেন, “আমি ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে গঠিত আইনজীবী প্যানেল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি নিজেই গুমের একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ কর্মকর্তার মধ্যে একজন রয়েছেন। তাই নৈতিক ও পেশাগত কারণে আমি আর এই মামলায় থাকতে পারছি না।”

সরোয়ার জানান, তাঁর অভিযোগের এক অভিযুক্ত এখন এই মামলার আসামিদের তালিকায়। ফলে “কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট” তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “নীতিগত ও প্রফেশনাল দিক থেকে আমার এই অবস্থানে থাকা ঠিক হবে না। সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এখন নতুন আইনি টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেবে পরিবারগুলো।”

জানা গেছে, ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন নিজে একসময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি ট্রাইব্যুনাল ও গুম কমিশনের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদসহ তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁদেরই একজন বর্তমানে এই ১৫ অভিযুক্ত কর্মকর্তার তালিকায় রয়েছেন।

ফলে নিজের দায়ের করা মামলার এক অভিযুক্তের পক্ষে আদালতে লড়াই করা তাঁর কাছে “অনৈতিক” মনে হওয়ায় তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

সূত্র : বার্তা বাজার