
বিগত সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হেফাজতে থাকা সাবেক ও বর্তমান ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭টায় বাংলাদেশ জেল প্রিজন ভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের আদালতে আনা হয়। এ সময় সেখানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর বিগত সরকারের শাসনামলে বিরোধী লোকদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এসব অভিযোগ আমলে নেন। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্ন মতাদর্শের লোক কিংবা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক, লেখক-সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা তুলে ধরেন। শুনানি শেষে গুম সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
গুম সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই অভিযোগের একটিতে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাব কর্মকর্তা কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন।
এর মধ্যে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে অপহরণ-গুম, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন—শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
এর মধ্যে চার জন সেনা কর্মকর্তা এখনও কর্মরত রয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী তারা কোনও পদে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিপুল সংখ্যক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কাউকে কাউকে হত্যার পর মরদেহও গুম করে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান গুমের শিকার ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে অন্যতম- ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম, আবদুল্লাহিল আমান আযমীসহ অনেকে। এসব ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুমের এ দুই মামলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে ‘কারাগার’ ঘোষণা করে সরকার।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন












































