
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে হতবাক হয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্পিকারের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন এক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসক হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শিরীন শারমিন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বাসভবনেই ছিলেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবেন কিংবা পালাতে পারেন এমনটা কখনোই বিশ্বাস করতেন না তিনি। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠলেও তাকে বিচলিত দেখা যায়নি। ওই দিনও তিনি সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশের লেকপাড়ের বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করেন এবং কিছু জরুরি ফাইলে সই করেন।
সংসদ এলাকা থেকে স্পিকারের পলায়নের বর্ণনা দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, দুপুরের পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গণভবন ও সংসদ ভবন অভিমুখে রওনা হওয়ার তথ্য তাকে জানানো হয়। এর পরই তিনি তড়িঘড়ি করে গানম্যান ও প্রটোকল রেখে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে সংসদ এলাকা ত্যাগ করেন। ১২ বছরের আবাসন ত্যাগ করার সময় ওই গাড়িতে স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন ও ছোট ছেলে সঙ্গে ছিলেন।
বর্তমানে সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের কাছেও তার বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। তবে ইতোমধ্যে তিনি স্বামীসহ দেশ ছেড়ে সীমান্তের ওপারে (ভারতে) আশ্রয় নিয়েছেন-এমন গুঞ্জন রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার এক বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নিতে দ্বিধায় রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর মধ্যে এ নিয়ে টানাপোড়েনও চলছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
শিরীন শারমিন কোথায়-এ প্রশ্ন ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছে। আমার দেশকে তিনি বলেন, সাবেক স্পিকারের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। তবে যতটুকু জানি তিনি ঢাকাতেই তার ভাইয়ের বাসায় স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছেন। তার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, পাসপোর্ট ছাড়াই তিনি স্থলপথে সীমান্তের ওপারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো তার বিষয়ে আমরা কোনো ধরনের নির্দেশ পাইনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিনের বিষয়টি নীতিনির্ধারক পর্যায়ের। উপর থেকে নির্দেশনা এলে অবশ্যই তার আলোকে কার্যক্রম শুরু করব। তার বিষয়ে আদালতের কোনো পরোয়ানা বা নির্দেশ পেলে অবশ্যই আমরা তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত।
শিরীন শারমিনের বিষয়ে সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থা ও একটি তদন্ত সংস্থার প্রধানের সঙ্গে কথা বলে আমার দেশ। ঢাকার একটি সুরক্ষিত এলাকায় ভাইয়ের বাসায় স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন বলে দাবি করেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই বলে জানান তিনি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিকে শিরীন শারমিন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ওই সময় তাকে একবার গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি জানার পর নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী ‘পুতুল সংসদের’ এই স্পিকার। ছয় মাস আগে তিনি নিজের ঠিকানা পাল্টে রাজধানীর একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে নিকটাত্মীয়ের বাসায় চলে যান। সেখানে অবস্থান করে তিনি নতুন পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ ও ছবি দেন। ওই কাজে তাকে পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন।
আত্মগোপনে আছেন এবং আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই শিরীন শারমিন নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে আঙুলের ছাপ এবং আইরিস দেন বলেও নিশ্চিত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন শাখা। ধানমন্ডির যে ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করতে চেয়েছিলেন, সেখানেও তিনি অবস্থান করছেন না বলে সরকারের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র- আমার দেশ।









































