প্রচ্ছদ জাতীয় হাসিনার দুঃস্বপ্নই কাল হলো আওয়ামী লীগের

হাসিনার দুঃস্বপ্নই কাল হলো আওয়ামী লীগের

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, তা শেখ হাসিনা নিজেই শেষ করে দিয়েছেন। তার চরম দাম্ভিকতা এবং প্রতিবিপ্লব ঘটানোর দুঃস্বপ্ন পুরো দলকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে ছাত্র-জনতার দাবির মুখে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এখন দলের নিবন্ধন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমনটি জানিয়েছেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট জীবন নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও দেশে রেখে যাওয়া দল এবং দলের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ ক্ষমতায় থাকার সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসন ও লুটপাটের জন্য তার উচিত ছিল জাতির কাছে ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু সেটি না করে উল্টো ভারতে বসে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার জন্য অব্যাহতভাবে দলের নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়েছেন। প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে দলের সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার নির্দেশও দেন। যদিও তার এমন উসকানিতে সাড়া দিতে গিয়ে অনেকে এখন কারাগারে। বাকিরা নতুন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ফলে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে দলটির নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার হবে। এ বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। ওইদিন একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গ-সংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে রোববার বলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দলের ভেতরে এবং দেশ চালাতে গিয়ে ক্রমেই একনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। যে কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, এত বড় একটি ঘটনার পরও শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তিনি নিরাপদে থেকে দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ নেতাকর্মীদের অব্যাহতভাবে উসকে দিচ্ছেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার এসব অপরাধের দায়ভার এখন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হচ্ছে, যা সত্যিই দুঃখজনক।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারিত হবে।

এ প্রসঙ্গে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী রোববার বলেন, শেখ হাসিনার অপকর্মের দায়ভার এখন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হচ্ছে। তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেখানে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছেন। আর দেশের ভেতরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছেন। শেখ হাসিনার উচিত ছিল নিজের অপকর্মের জন্য, বিশেষ করে ক্ষমতায় থেকে যে অন্যায়-অবিচার করেছেন, এর জন্য প্রকাশ্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। কিন্তু তা না করে উল্টো তিনি প্রতিবিপ্লব করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উচ্ছেদের পণ করেছেন। তার কারণেই আজ আওয়ামী লীগের এই পরিণতি। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা তার শাসনামলেই আওয়ামী লীগের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এখন তার কারণেই দলটির দাফন-কাফনের কাজটিও সম্পন্ন হলো।