নৌকা প্রতীক নিয়ে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম ওরফে মনি। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক ওরফে রাজু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়ে নৌকা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামা রাশেদ খান মেনন সুখকর অবস্থানে নেই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি। ভোটের মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পাশে পাচ্ছেন না তিনি। বাকি দুই প্রার্থী মনি ও রাজু পাচ্ছেন নেতাকর্মীদের সমর্থন। সংসদীয় এলাকাটির বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে ভোটার ও অন্যান্য দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
ভোটারদের দাবি, রাশেদ খান মেননের ওপর হামলা-মামলায় বানারীপাড়ার মনি জেলে ছিলেন। উজিরপুর ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা খুনের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এই দুটি কারণে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ভেতরে ভেতরে মেননের বিরোধিতা করছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শক্তভাবে হাল না ধরলে এই আসনের বিজয় নৌকা হারাতে পারে।
সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজনের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। নৌকা কিংবা স্বতন্ত্র―জয়ী যিনিই হোন না কেন, এই আসনে নির্বাচন যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, সে বিষয়ে স্থানীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররাও একমত পোষণ করেছেন।
বরিশাল-২ আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন দলীয় প্রার্থী এবং দুজন স্বতন্ত্র। তবে নির্বাচনে মূল লড়াই হবে রাশেদ খান মেননের সঙ্গে তিনবারের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি ও রাজুর।
তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নকুল কুমার বিশ্বাসের একটা ভোটব্যাংক রয়েছে।
বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়―নৌকা, ট্রাক, ঈগল প্রতীকের পোস্টারই মোড়ে মোড়ে সাঁটানো আছে। তবে দুটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট ঘিরে উৎসাহ দেখা গেছে। তবে সাধারণ ভোটারদের এই উৎসাহ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে। রাশেদ খান মেননের গ্রামের বাড়ি এই আসনে না হওয়ায় সচেতন ভোটার ছাড়া অপরদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি।
নতুন বিরোধ নৌকা নিয়ে
বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে এখানে এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস। ইউনুস বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। রাশেদ খান মেনন এবার এই আসনে ১৪ দলের প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় তালুকদার মো. ইউনুস নৌকা থেকে ছিটকে পড়েন।
বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, হঠাৎ এই আসনে রাশেদ খান মেনন ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পাওয়ায় হিসাব-নিকাশ জটিল হয়ে গেছে। এখানে তালুকদার ইউনুসের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুব ভালোভাবে নেননি। আওয়ামী লীগের দুজন শক্তিশালী প্রার্থী স্বতন্ত্র হয়ে মাঠে নামায় দলীয় নেতাকর্মীরাও বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) বানারীপাড়া উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হুমায়ুন কবিরকে ২০১৩ সালে ১৯ জুলাই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভপতি আবদুস ছালাম, চাখার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু, সলিয়াবাকপুর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউল হক মিন্টুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু এবং জিয়াউল হক মিন্টু প্রকাশ্যে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক ওরফে রাজুর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও বিশারকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম বেপারী এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মহসীন রেজা।
সেলিম বেপারী এবং মহসীন রেজা বলেন, শেরেবাংলার নাতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এলাকার ছেলে, এ কারণেই তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। তা ছাড়া যাঁকে নৌকা দেওয়া হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাই নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে মাঠে ভোট চাইছেন না।
বিরোধ অনেক পুরনো
ওয়ার্কার্স পার্টির তোপখানা কার্যালয়ের সামনে ১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট রাশেদ খান মেননকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলে তিনি আহত হন। ওই ঘটনায় বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই সময় বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেন। সেই থেকে মনির সঙ্গে মেননের বিরোধ চলে আসছিল। তাঁদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, মনিরুল ইসলাম ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পিরোজপুর-২ (স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া) আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
ভোটারদের ধারণা, এবারও রাশেদ খান মেননের সঙ্গে মনিরুলের পুরনো বিরোধ তো আছেই। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ও ফাইয়াজুল হক শেষ সময়ে মেননকে ঠেকাতে একাট্টা হলেও হতে পারেন।
উজিরপুর উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাবু লাল শীল ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খুন হন। ওই হত্যা মামলায় উজিরপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের বর্তমান সভাপতি শিপন মোল্লা, উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরে তাঁরা ওই মামলা থেকে খালাস পান। এ নিয়ে উজিরপুরে ওয়ার্কার্স পাটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পুরনো বিরোধ আছে।
নেতারা যা বলছেন
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশাল-২ আসনে নেতার কি অভাব পড়েছে যে বহিরাগত এনে নৌকার প্রার্থী করতে হবে?’
ফাইয়াজুল হক বলেন, ‘নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। আশা করি, ভোটাররা সুচিন্তিত মতামত দিয়ে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে আমাকে বিজয়ী করবেন।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘তিনি বরিশালেরই সন্তান। এখান থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকার সংসদ সদস্য হলেও এলাকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সব সময় ছিল। তাঁর বিশ্বাস, উজিরপুর-বানারীপাড়াবাসীসহ গোটা বরিশালের মানুষ ভোটের মাঠে তাঁকে সহযোগিতা করবেন।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |