
ইনকিলাব মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, ময়মনসিংহে শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংসভাবে হত্যা, পাশাপাশি গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিএসও অ্যালায়েন্সসহ মোট ৮টি সংস্থা ও নেটওয়ার্ক এবং ৪৬ জন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এসব ঘটনায় মানবিকতার ঘাটতি এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগের অভাব পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। তারা উল্লেখ করেন, এসব ঘটনা নাগরিক নিরাপত্তা, মুক্ত গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক পরিসর, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতাকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র যদি দ্রুত কার্যকর প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে একদিকে যেমন জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে তেমনি একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
বিবৃতিতে শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে বিচারহীনতা, নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যায় হামলা ভাঙচুরের বিরোধিতা করে হাদির দেয়া শেষ বার্তার অবমাননা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া প্র থম আলো–ডে ইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচীতে সংগঠিত হামলা ও সময়মতো সুরক্ষা না দেয়ারও সমালোচনা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংস হত্যার সমালোচনা করে বলা হয়, মব সহিংসতা ও সংখ্যালঘু সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতা রয়েছে।
এছাড়া সার্বিক উদ্বেগ জানিয়ে সহিংসতা–অগ্নিসংযোগ–উসকানি, নির্বাচন বিঘ্নের ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও ইচ্ছা নিয়েও বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসবের যথাযথ সমাধান না হলে আয়োজিত নির্বাচন নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
সরকারের প্রতি আহ্বান
১. হাদি হত্যাকাণ্ড: দ্রুত গ্রেফতার; তদন্তের অগ্রগতি জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ; রাষ্ট্রীয় গাফিলতি থাকলে দায় নির্ধারণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
২) মিডিয়া ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা: প্র থম আলো, ডে ইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচীসহ সব হামলার পৃথক ও স্বাধীন তদন্ত; উসকানিদাতা/সংগঠক/অর্থদাতা চিহ্নিত করে বিচার; ভবিষ্যৎ হামলা ঠেকাতে স্পষ্ট নিরাপত্তা প্রোটোকল ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
৩) দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড: স্বাধীন ও সময়সীমাবদ্ধ তদন্ত; অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার; সংখ্যালঘু সুরক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক আস্থা গঠনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিদাতা। একইসঙ্গে দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪) প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: আগাম সতর্কতা, ঝুঁকি মূল্যায়ন, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন এবং কমান্ড সমন্বয়—এই চারটি বিষয়ে অবিলম্বে দৃশ্যমান উন্নতি; ব্যর্থতার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
৫) উসকানি/ঘৃণাভাষণ/মব মোবিলাইজেশন: অনলাইন ও অফলাইনে সহিংসতা উসকে দেয়া ব্যক্তি ও নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা; ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা জোরদার করারও কথা বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাই—তারা যেন অবিলম্বে প্রকাশ্যে সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করে শান্তি, সংযম, সংখ্যালঘু সুরক্ষা, মুক্ত গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক পরিসরের নিরাপত্তা এবং নির্বাচন স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। দলীয় পরিচয় নির্বিশেষে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তি/সমর্থকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দিন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভয়, ঘৃণা ও প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ করাই আজ জাতীয় দায়িত্ব।
বিবৃতিতে দাতারা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই—রাষ্ট্র, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যমসহ সকলে সম্মিলিতভাবে যদি এখনই কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তবে জনআস্থা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক এ অগ্রযাত্রা আরও গভীর সংকটে পড়বে—যার দায় এড়ানো যাবে না।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন
সংস্থা ও নেটওয়ার্ক সমূহ
১) সিএসও অ্যালায়েন্স
২) নারীপক্ষ
৩) অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশ (এএবি)
৪) বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)
৫) দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (DSK)
৬) ডাসকো ফাউন্ডেশন
৭) ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)
৮) মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক)
ব্যক্তিগণ
১) সারা হোসেন, সহ-আহ্বায়ক, সিএসও অ্যালায়েন্স
২) আসিফ সালেহ, সহ-আহ্বায়ক, সিএসও অ্যালায়েন্স
৩) রাশেদা কে. চৌধুরী, সাবেক উপদেষ্টা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সদস্য, নির্বাহী কমিটি, সিএসও অ্যালায়েন্স
৪) সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী
৫) ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং প্রধান- দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন
৬) সুমাইয়া ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে) এবং সদস্য, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন
৭) রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, অভিনেত্রী এবং উন্নয়নকর্মী
৮) আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী
৯) গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১০) শাহীন আনাম, সদস্য, নির্বাহী কমিটি, সিএসও অ্যালায়েন্স
১১) কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২) টনি মাইকেল গোমেজ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ (কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট)
১৩) ড. দিনা এম সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক
১৪) মাহরুখ মহিউদ্দিন, প্রকাশক ও অ্যাক্টিভিস্ট
১৫) ডা. মোঃ খাইরুল ইসলাম, উন্নয়ন কর্মী
১৬) কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭) কে এ এম মোর্শেদ, ফোকাল পয়েন্ট, সিএসও অ্যালায়েন্স
১৮) সাঈদ আহমেদ, সমন্বয়ক, সিএসও অ্যালায়েন্স সচিবালয়
১৯) সালমা মাহবুব, উন্নয়ন কর্মী
২০) মুরশেদ আলম সরকার, উন্নয়ন কর্মী
২১) মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, উন্নয়নকর্মী
২২) কাশফিয়া ফিরোজ, মানবাধিকার কর্মী
২৩) কবিতা চাকমা, লেখক ও স্থপতি
২৪) এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক
২৫) হাসান তালুকদার, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৬) ইসমাইল সাদী, সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৭) তাসনিম সিরাজ মাহবুব, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮) মার্জিয়া রহমান, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৯) কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩০) সুমন সাজ্জাদ, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩১) সানাইয়া ফাহীম আনসারী, মানবাধিকার কর্মী
৩২) ফাতেমা শুভ্রা, শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩) কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, ঢাবি
৩৪) আ-আল মামুন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৫) রাইয়ান রাজী, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৩৬) অলিউর সান, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
৩৭) তানভীর সোবহান, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮) তাহমিনা খানম, সহযোগী অধ্যাপক, ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯) সৌমিত জয়দ্বীপ, সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৪০) হানিয়্যুম মারিয়া খান, জৈষ্ঠ্য প্রভাষক, পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
৪১) কাজী শুসমিন আফসানা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪২) সিরাজাম মুনিরা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
৪৩) সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৪) হাসান তৌফিক ইমাম, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৪৫) এএসএম কামরুল ইসলাম, শিক্ষক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
৪৬) মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র : সময় নিউজ










































