প্রচ্ছদ জাতীয় হাদিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বান্ধবীকে যা বলেছিলেন শুটার ফয়সাল  

হাদিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বান্ধবীকে যা বলেছিলেন শুটার ফয়সাল  

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ। তাকে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে।

ওসমান হাদিকে হত্যার নেপথ্যে সুপরিকল্পিত মিশনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। হাদি এবং শুটার ফয়সালের পরিচয় হয় ইনকিলাব মঞ্চের কালচারাল সেন্টারে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে হত্যার আগে শুটার কীভাবে হাদিকে অনুসরণ করে ও ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসেন শুটার ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। প্রায় ছয় মিনিটের সেই বৈঠকে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এটি ছিল ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ। 

এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল আবার কালচারাল সেন্টারে আসেন। এবার তার সঙ্গে ছিলেন আলমগীর। এই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকেই হাদির টিমে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। ১০ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেন তিনি।

প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন ফয়সাল। মিশন বাস্তবায়নের জন্য নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করেন তিনি। ১১ ডিসেম্বর মিশন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিতে ওঠেন পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায়। হামলার দিন ভোরে উবারে করে যান হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে।

রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি হেমায়েতপুরের গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল বলেন, তিনি হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করছেন এবং এতে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। তিনি ঘটনার পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা বলেন।

সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে বান্ধবীকে নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হন ফয়সাল। বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আলমগীর। উবারে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেওয়ার পর বেো ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয়ে সরাসরি যান হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায়। সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছান ফয়সাল।

ওসমান হাদির মতোই এনসিপি নেতাকে গুলি করে পালায় দুর্বৃত্তরা প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে শুটার পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকেন। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহন করা অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করলে দুজন নেমে আবারও প্রচারণায় যুক্ত হন।

নামাজ শেষে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি সেখান থেকে রওনা হলে শুটারাও পিছু নেয়। দৈনিক বাংলা মোড়ে ডান দিকে ঘুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে ঢুকে পড়ে তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফাঁকা জায়গা খুঁজে বেড়ানোর পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির মৃত্যু হয়। 

পরে তাকে দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে) দাফন করা হয়।

এদিকে জানা গেছে, বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে পশ্চিম আগারগাঁও থেকে সিএনজিতে করে আমিনবাজারে যায় ফয়সাল। সেখান থেকে উবারে ধামরাইয়ের কালামপুর, এরপর ভাড়া করা প্রাইভেটকারে নবীনগর হয়ে গাজীপুরের চন্দ্রা-মাওনা পেরিয়ে পৌঁছায় ময়মনসিংহে। সেখান থেকে হালুয়াঘাটের ধারাবাজার পেট্রোল পাম্পে যায় তারা। পাম্পের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১১টা ৩১ মিনিটে সেখানে পৌঁছায় শুটারদের বহনকারী প্রাইভেটকার। মানবপাচারকারী ফিলিপ স্নাল মোটরসাইকেলে এসে তাদের রিসিভ করে সীমান্তের দিকে নিয়ে যান।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিপের দুই সহযোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে শ্যুটাররা ভারতে পালিয়ে যায়। শুটার ফয়সালের ফোনের আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণে দেখা যায়, তার লোকেশন ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রে এবং সে রিলায়েন্স সিম ব্যবহার করছিল।

সূত্র : আরটিভি