প্রচ্ছদ সারাদেশ ‘হয়তো বাঁচব না, আমার স্ত্রী-সন্তান-মাকে দেখে রাখিস’

‘হয়তো বাঁচব না, আমার স্ত্রী-সন্তান-মাকে দেখে রাখিস’

‘মাত্র আড়াই মাস আগে ওদের বাবা মারা গেছে। আমার বেটার টাকায় চলতো বড় ছওয়ালের পড়াশোনাসহ চারজনের সংসার। বেটা আর নাইরে। এহন কিডা চালাবিনি সংসার।’

রবিবার (২৮ জুলাই) কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মোছা. বুলজান খাতুন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুর গ্রামের মৃত সাবের আলীর স্ত্রী।

বুলজানের ছোট ছেলে আব্দুস সালাম (২৪) নারায়নগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় একটি দশতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের একটি শাখার সাজসজ্জার কাজ করছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত শনিবার বিকেলে ওই ভবনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি।

ঘটনার চারদিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে আনা হয় তার লাশ। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নিহতের স্ত্রী মারিয়া খাতুন (২০), দেড় বছর বয়সী সন্তান মাহিম ছাড়া পরিবারে রয়েছেন বড় ভাই আলামিন (২৫) ও মা বুলজান খাতুন। আলামিন রাজবাড়ী জেলার পাংশা সরকারি কলেজের অনার্স (বাংলা) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বুলুজান খাতুনের দাবি, তার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার করতে হবে। পাশাপাশি যোগ্যতা অনুযায়ী বড় ছেলের চাকরিসহ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডে আধাপাকা ঘরের মেঝেতে সালামের মাকে ঘিরে বসে আছেন স্বজন ও উৎসুক জনতা। তার মা বিলাপ করছেন। আরেকটি কক্ষে শুয়ে আছেন শোকাতুর স্ত্রী মারিয়া খাতুন। তিনি অসুস্থ। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। পাশেই বিছানার ওপর খেলা করছে দেড় বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মাহিম। সে জানে না, তার বাবা আর নেই।

কাঁন্না জড়িত কণ্ঠে ভাই আলামিন বলেন, ‘শনিবার বিকেলে হঠাৎ ফোন দিয়ে সালাম আমাকে বলল ভবনে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি ( সালাম) মনে হয় আর বাঁচব না। তুই আমার স্ত্রী, সন্তান ও মাকে দেখে রাখিস। এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর ওর সন্ধান পাইনি। পরে গত রবিবার জানা যায় ভাই আর নেই।’

তিনি আরও বলেন, ভাইয়ের টাকায় চলতো আমার পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ। এখন কীভাবে কী করব তা বুঝতে পারছি না। আমি ঘাতকদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়।

নিহত সেলিম মন্ডলের স্ত্রী শোভা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শনিবার বিকেলে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। ফোনে বারবার বলছিল প্রচুর ধোঁয়া। নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। হয়তো আর বাঁচবা না। বাবা, মা, মেয়েকে দেখে রেখো।

জানা গেছে, সেদিন ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে ইন্টোরিয়র ডিজাইনের কাজ করছিলেন একই গ্রামের ওহাব মন্ডলের ছেলে সেলিম মন্ডল (২৮), তার ভাতিজা ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো. ফয়সাল মন্ডল (১৮), মো. কাদেরের ছেলে মো. পারভেজ, আবুল মাস্টারের ছেলে আব্দুল হামিদ ও আক্কাস বিশ্বাসের ছেলে মাহবুব বিশ্বাস। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে সেদিন তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন সেলিম মন্ডল। তার লাশও গতকাল মঙ্গলবার সন্ধায় আনা হয়েছে গ্রামে। রাতে একই কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়। আর অন্যান্যরা আহত হয়েছেন আগুনে পুড়ে। আহতদের মধ্যে হামিদ ঢাকায় একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর ফয়সাল, পারভেজ ও মাহবুব এলাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত ফয়সাল মন্ডল বলেন, তারা ১৪ জন ব্যাংকে সাজসজ্জার কাজ করছিলেন। সেদিন দুপুরেই ভবনের বাইরে থেকে শুধু গুলির আওয়াজ আসছিল। পুলিশের গুলিতে একজন ছাত্র মারা গেছিল। আর বিকেলে ব্যাংকের গেটে আগুন দিয়েছিল আন্দোলনকারী। আগুনের কারণে প্রচুর ধোঁয়া ছিল। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন আমার কাকুরা (সেলিম – সালাম) তিনতলায় চলে গেছিল। আর অনেকক্ষণ প্রাণপন চেষ্টা করে আমরা কয়েকজন নিচে চলে আসছিলাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত কুমারখালী বাড়ি এমন একজন ছাত্রসহ ৪ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিবার থেকে লিখিত আবেদন করলে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ আসলে তা প্রদান করা হবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।