প্রচ্ছদ জাতীয় হঠাৎ ডিবি ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার

হঠাৎ ডিবি ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে হঠাৎ প্রত্যাহার করে রাজশাহীর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রশাসনিক কারণে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- ডিবি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ইকবাল বাহার, পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন এবং উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফজলুল হক।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল বাহার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনিক কারণে আমাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ঘটনাটিতে কিছু ভুল বোঝাবুঝিও রয়েছে।

এদিকে এই প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র এক নেতা বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে এনসিপি’র এক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে রাজু মুন্সি (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে বগুড়ায় নিয়ে আসে। পরদিন তাকে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, রাজু মুন্সি নিজেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল হককে ফোন করেন। তিনি ওই ব্যবসায়ীর মাদ্রাসাপড়ুয়া সন্তানের জন্য ‘শিক্ষাবৃত্তি প্রদান’-এর কথা বলে ব্যাংক হিসাব নম্বর ও পিন সংগ্রহ করেন। এরপর ওই হিসাব থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ টাকা স্থানান্তর করে নেন।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তের দায়িত্ব পান ডিবি পরিদর্শক রাকিব হোসেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ অনুসন্ধানে রাজু মুন্সিকে শনাক্ত করার পর তাকে গ্রেপ্তারে র‌্যাব-১২ এর সহযোগিতা চাওয়া হয়।

তবে আনুষ্ঠানিক অনুরোধপত্রে রাজু মুন্সিকে ‘ডাকাতি মামলার আসামি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। র‌্যাব সেই তথ্য অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করলে পরবর্তীতে বগুড়া ডিবি তাকে প্রতারণা মামলায় চালান দেয়।

এ ঘটনার পর প্রশাসনের ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। একে কেন্দ্র করেই ডিবি ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিবি ইনচার্জ ইকবাল বাহার বলেন, ডাকাতির মামলার অনুরোধপত্র পাঠানোর বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ছিল একটি প্রশাসনিক ভুল বোঝাবুঝি। রাজুকে প্রতারণা মামলায়ই গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং তার কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত সিমকার্ড, নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ব্যাংকে জমা থাকা ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকাও আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

ডিবির তিন কর্মকর্তার প্রত্যাহারকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, এটি নিয়মিত প্রশাসনিক বদলি; আবার কেউ মনে করছেন, একটি সফল অভিযান পরবর্তী ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে।

এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একটি বড় প্রতারণা চক্রকে ধরার পরই এমন প্রত্যাহার। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।

সুত্রঃ একশে টেলিভিশন