প্রচ্ছদ ধর্ম ও জীবন স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নামাজ পড়ার বিধান

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নামাজ পড়ার বিধান

নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়কারীকেও অনেক সময় প্রয়োজনের খাতিরে বাড়িতে নামাজ আদায় করতে হয়। আর বাড়িতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে জামাতের ফজিলত লাভের নিমিত্তে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জামাত করা ঠিক আছে।

তবে স্বামী-স্ত্রীর জন্য জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, ইসলামি শরিয়তের বিধান। স্বামী-স্ত্রীর জামাতের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- স্ত্রীকে স্বামী নিজের এক কাতার পেছনে দাঁড় করাবে। অনেকে মসজিদে যেতে না পেরে স্ত্রীর সঙ্গে ঘরেই জামাতে নামাজ আদায় করেন। এভাবে ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে নামাজ পড়লে কি জামাতের সওয়াব পাওয়া যাবে?

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা রুকু কারীদের সঙ্গে রুকু করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوۃَ وَ ارۡكَعُوۡا مَعَ الرّٰكِعِیۡنَ অর্থ: তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো। (সুরা বাকারা: ৪৩)

পবিত্র কোরআনে যুদ্ধ বা নিরাপত্তাহীনতার সময়ও বিশেষ পদ্ধতিতে সতর্কতা অবলম্বন করে জামাতে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِذَا كُنۡتَ فِیۡهِمۡ فَاَقَمۡتَ لَهُمُ الصَّلٰوۃَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَۃٌ مِّنۡهُمۡ مَّعَكَ وَ لۡیَاۡخُذُوۡۤا اَسۡلِحَتَهُمۡ ۟ فَاِذَا سَجَدُوۡا فَلۡیَكُوۡنُوۡا مِنۡ وَّرَآئِكُمۡ ۪ وَ لۡتَاۡتِ طَآئِفَۃٌ اُخۡرٰی لَمۡ یُصَلُّوۡا فَلۡیُصَلُّوۡا مَعَكَ وَ لۡیَاۡخُذُوۡا حِذۡرَهُمۡ وَ اَسۡلِحَتَهُمۡ ۚ وَدَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا لَوۡ تَغۡفُلُوۡنَ عَنۡ اَسۡلِحَتِكُمۡ وَ اَمۡتِعَتِكُمۡ فَیَمِیۡلُوۡنَ عَلَیۡكُمۡ مَّیۡلَۃً وَّاحِدَۃً ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡكُمۡ اِنۡ كَانَ بِكُمۡ اَذًی مِّنۡ مَّطَرٍ اَوۡ كُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَنۡ تَضَعُوۡۤا اَسۡلِحَتَكُمۡ ۚ وَ خُذُوۡا حِذۡرَكُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ اَعَدَّ لِلۡكٰفِرِیۡنَ عَذَابًا مُّهِیۡنًا

অর্থ: আর আপনি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন তারপর তাদের সঙ্গে নামাজ কায়েম করবেন; তখন তাদের একদল আপনার সঙ্গে যেন দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তাদের সিজদা করা হলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা নামাজে শরিক হয়নি তারা আপনার সাথে যেন নামাজে শরিক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে; কাফেররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাতে তারা তোমাদের উপর একেবারে ঝাপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও বা পীড়িত থাক তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোনো দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা নিসা: ১০২)

জামাতে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা উচিত। কোনো অসুবিধায় জামাতে নামাজ আদায় করতে না পারলে ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেও জামাতের সওয়াব পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।

স্বামী-স্ত্রীর জামাতের পদ্ধতি

কখনো মসজিদের জামাত না পেলে বা অপারগতার কারণে মসজিদে যাওয়া না হলে— সেক্ষেত্রে একাকী নামাজ না পড়ে বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়াই উত্তম। (বাদায়িউস সানায়ি: ১/৩৮৫; আদ্দুররুল মুখতার: ১/৫৫৩)

জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে পেছনে দাঁড়াবে। এতটুকু সম্ভব না হলে, ডান পাশে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সমান হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ এভাবে দাঁড়ালে উভয়ের নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। (রাদ্দুল মুহতার: ১/৫৭২)

জামাতের কাতার বিন্যাস

জামাতে কাতারের বিন্যাসের সুন্নত পদ্ধতি হলো, প্রথমে বালেগ পুরুষ দাঁড়াবে, এরপর নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক দাঁড়াবে। যদি নারীরা জামাতে অংশগ্রহণ করে তারা সবার পেছনে দাঁড়াবে। (সুনানুল বাইহাকি, হাদিস নং : ৫১৬৬; হেদায়া : ১/২৩৯)

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং নারীকে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন। (মুসলিম: ১৩৭৭)

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।