প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার স্ত্রীকে খুন করে হোটেলের নিচে নামেন, ফিরে গিয়ে হত্যা করেন ছেলেকে

স্ত্রীকে খুন করে হোটেলের নিচে নামেন, ফিরে গিয়ে হত্যা করেন ছেলেকে

বগুড়ায় এক নারী ও তার এক বছর বয়সী ছেলের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার ঐ নারীর স্বামী আজিজুল হক (২৩) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফসানা রিমার আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত আজিজুল।

বগুড়া আদালতের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন ও শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার হেউট গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে। নিহত আশামনি নারুলী এলাকার আসাদুল ইসলামের মেয়ে।

এর আগে, রোববার বেলা ১২টার দিকে বগুড়া শহরের বনানী এলাকার শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেল থেকে আশামনি ও তার ছেলে আবদুল্লাহ হেল রাফির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ হত্যার ঘটনায় স্বামী আজিজুল হককে প্রধান আসামি করে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত আশামনির বাবা আসাদুল ইসলাম। ঐ মামলায় আজিজুল হকের বাবা হামিদুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। এরইমধ্যে আজিজুল হক ও তার বাবা হামিদুর রহমানকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে আজ আজিজুল হক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজিজুল হক আদালতকে জানিয়েছেন, তার মা-বাবার সঙ্গে স্ত্রী আশামনির বনিবনা হতো না। ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। সাংসারিক অশান্তির কারণে তিনি স্ত্রীকে হত্যা পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক কেনাকাটা করে দেওয়ার কথা বলে শনিবার বিকেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শহরে বের হন। একফাঁকে বগুড়া শহর থেকে গরু জবাই করার চাকু কেনেন। এরপর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শুভেচ্ছা হোটেলে ওঠেন। সাড়ে ৮টার দিকে পারিবারিক নানা বিষয়াদি নিয়ে বিতণ্ডার একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাথরুমে নিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। এরপর লাশ বস্তায় ভরেন। স্ত্রীকে হত্যার সময় তার এক বছর বয়সী শিশুসন্তান আবদুল্লাহ আল রাফি বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি হোটেলের নিচে নামেন। কিছুক্ষণ পরে আবার হোটেলের কক্ষে ফিরে যান। এ সময় ঘুমন্ত শিশুসন্তানের কাছে কিছুক্ষণ বসে ছিলেন। মাকে হত্যা করায় শিশুটি কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে চিন্তায় পড়েন। আরো কিছুক্ষণ পর শিশুটি ঘুম থেকে জেগে উঠে মাকে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। জানাজানির ভয়ে নিজের শিশুসন্তানকে গলাকেটে হত্যা করেন। ধারালো চাকুর আঘাতে দেহ থেকে শিশুর মাথা আলাদা হওয়ার পর দেহের খণ্ডিত অংশ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। এরপর ব্যাগে শিশুসন্তানের মাথা ভরে হোটেল কক্ষ থেকে বেরিয়ে করতোয়া নদীতে ফেলে দেন।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে ৭০০ টাকায় বনানীর শুভেচ্ছা হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া করেন আজিজুল হক। স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর আজিজুল হক শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান, আশামনি ও রাফিকে শহর থেকে ইজিবাইকে বাসায় পাঠিয়েছেন। এরপর তাদের খোঁজ মিলছে না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন আজিজুলের কথা বিশ্বাস করে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাতভর খুঁজে না পেয়ে আজিজুলকে নিয়ে তার শ্বশুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান। আজিজুল চাকরিতে সমস্যা হবে অজুহাতে জিডি করতে রাজি না হলে শহরে মাইকিংও করা হয়।

হোটেল ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে আজিজুল হোটেলের ভাড়া পরিশোধ করতে হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে আসেন। কথাবার্তায় সন্দেহ হলে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে আজিজুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর হোটেলের কক্ষ তল্লাশিকালে আজিজুলের স্ত্রী আশামনি ও সন্তান রাফির মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের জেরার মুখে আজিজুল জানান, স্ত্রী-সন্তানকে নিজেই গলাকেটে হত্যা করেছেন তিনি।

এদিকে, শিশুটির দেহের খণ্ডিত অংশের সন্ধান নামে ডুবুরি দল। তবে প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় করতোয়া নদীতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েও শিশু আবদুল্লাহ আল রাফির দেহের খণ্ডিত অংশের (মস্তক) সন্ধান মেলেনি। পরে ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।