প্রচ্ছদ জাতীয় সেই ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির পরিকল্পনা হয় ৩ মাস আগে, যেভাবে উদ্ধার...

সেই ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির পরিকল্পনা হয় ৩ মাস আগে, যেভাবে উদ্ধার হলো

সেই ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির পরিকল্পনা হয় ৩ মাস আগে, যেভাবে উদ্ধার হলো

রাজধানীর ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এই চুরির ঘটনায় একটি মোটরসাইকেলসহ চুরি হওয়া প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ, ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রুপা ছাড়াও নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবি জানিয়েছে, দীর্ঘ ৩ মাস ধরে চাঞ্চল্যকর এই চুরির পরিকল্পনা করা হয়। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশ কয়েকবার রেকিও করে চোর চক্রের সদস্যরা। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিন (৪৬), অনিতা রায় (৩১), মো. নূরুল ইসলাম (৩৩) ও উত্তম চন্দ্র সুর (৪৯)।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, গত ৮ অক্টোবর রাতে মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় রমনা থানায় মামলার পরপরই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চোর চক্রের সদস্যরা গত ৩ মাস ধরে ফরচুন শপিং মলের ওই দোকানটি থেকে স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করে। পরে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকবার রেকিও করে। একপর্যায়ে চুরির উদ্দেশ্যে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগে থেকেই মার্কেটের পেছনে টিনের চালের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ঘটনার দিন গ্রেপ্তার সুমন মার্কেটে প্রবেশ করে বাথরুমের জানালার গ্রিলে সুতার মাধ্যমে ‘ইউ লুপ’ তৈরি করে সেগুলো মাটি পর্যন্ত নামিয়ে বেঁধে রাখে এবং চুরির সময় নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য বাথরুমে বোরকা রেখে আসে।

পরবর্তীতে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে চোর চক্রের সদস্যরা গণপূর্ত কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে মার্কেটের পেছনে পৌঁছায়। তারপর সেখানে আগে থেকে বেঁধে রাখা সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে তারা ছাদে উঠে। এরপর গ্রিল কেটে বাথরুমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বোরকা পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে শপিং মলে প্রবেশ করে। তারপর শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে তারা রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে একই পথে পালিয়ে যায়। ওই সময় তারা চুরিতে ব্যবহৃত বোরকা ও সরঞ্জাম গণপূর্ত কোয়ার্টারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়।

ডিবি জানায়, চোর চক্রের সদস্যদের অবস্থান শনাক্তের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহিনের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২১ দশমিক ০৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি একই দিন বরিশালের উজিরপুর থানার পূর্ব হারতা গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামি শৈশব রায় সুমনের স্ত্রী অনিতা রায়ের হেফাজত থেকে আরও ৫২ দশমিক ৮১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মো. নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে প্রায় ২ ভরি স্বর্ণ ও একটি মোটরসাইকেলসহ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অর্থ সরবরাহকারী ও রেকিতে অংশগ্রহণকারী উত্তম চন্দ্র সুরকে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে পুরান ঢাকার শাখারী বাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পৃথক এ অভিযানে তার কাছ থেকেও ১৩ দশমিক ৬৭ ভরি স্বর্ণ ও ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রুপা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, চোরাই স্বর্ণের মধ্যে বেশকিছু স্বর্ণ পলিথিনে ভরে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই অভিযানের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।