
বান্দরবান থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত থেকে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডি বলছে, পর্ন ওয়েবসাইটগুলোতে অন্য বাংলাদেশিদের যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে। মূলত নতুনদের যুক্ত করলে মুনাফা দিত আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটগুলো।
জানা গেছে, ওই যুবকের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সেই নারী তার তৃতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীকে তালাক হওয়ার পর এ তরুণীকে বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় যুবক।
গত ২৩ আগস্ট সিএনজি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক ও তার একভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া মাদক মামলায়ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সেই যুবক।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বান্দরবান থেকে এ দম্পতিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে এক বছরে তাদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। এতে করে দুই দিন ধরে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রেপ্তার যুবকের বাবা পেশায় অটোরিকশাচালক। তবে তাদের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের কারও সম্পর্ক নেই। চার বছর আগে সে বাড়ি থেকে বের হলে আর ফেরেনি। তবে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসে বলে প্রতিবেশীরা জানান। দুই বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়া নারীকে নিয়ে বাড়ি আসে এবং তাকে বিয়ে করেছে বলে দাবি করে। তবে সে তার তৃতীয় স্ত্রী। অসামজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে স্থানীয়রা তাদের এড়িয়ে চলত বলেও জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (৫০) গ্রেপ্তার যুবকের প্রতিবেশী জানান, পরিবারটি চুরি ও মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের সঙ্গে সমাজের কারও সম্পর্ক নেই। সোমবার ফেসবুকে দেখলাম সে তার স্ত্রীকে নিয়ে খারাপ ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে তার বাড়িতে কেউ আসে না, মাঝেমধ্যে এলেও কারও সঙ্গে কথা বলে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এই পরিবারটি বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় তাদের সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। তারা আগে থেকেই এসব কাজে জড়িত। কয়েক দিন আগে একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে তাদের সঙ্গে সালিশি বৈঠকও হয়েছে। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, আলোচিত পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত যুবক মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে সিএনজি অটোরিকশা চুরির অভিযোগও রয়েছে। সিএনজি চুরির ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট তাদের বাড়ি তদন্তে গেলে মাদকের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির অভিযোগে ওই যুবক ও তার এক ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এর আগে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বসেই আন্তর্জাতিক প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকার অভিযোগ ওঠে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ‘মডেল’ বলে পরিচয় দিতেন। তারা বিশ্বের অন্যতম বড় ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন।
গবেষণামূলক অনুসন্ধানভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম দ্য ডিসেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাস থেকে অনলাইনে সক্রিয় হন। এক বছরের মধ্যে তারা শতাধিক ভিডিও প্রকাশ করে বিপুল দর্শক ও অনুসারী অর্জন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুগলটি শুধু একটি ওয়েবসাইটেই নয়, কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কনটেন্ট প্রকাশ করছেন। সেসঙ্গে টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেও নিজেদের কার্যক্রম প্রচার করছেন। ২০২৪ সালের মে মাসে তাদের নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা হয়, যেখানে কয়েক হাজার সদস্য রয়েছেন। সেখানে নতুন ভিডিওর লিংক ও তাদের আয়ের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, তরুণদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো। কিছু অনলাইন পোস্টে দেখা গেছে, ‘নতুন ক্রিয়েটর যুক্ত করুন, অর্থ উপার্জনের সুযোগ পান’— এমন বার্তা দেওয়া হচ্ছে।