প্রচ্ছদ হেড লাইন সেই তরুণী কেন ভিন্ন কথা বলছেন মিলছে না উত্তর

সেই তরুণী কেন ভিন্ন কথা বলছেন মিলছে না উত্তর

দেশজুড়ে: শনিবার গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে হাজির হয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে পরীক্ষা করতে বলেন ডুমুরিয়ার এক তরুণী। পরদিন বিকেলে তরুণীকে তার মাসহ হাসপাতালের গেট থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে।

মারধর করা হয় সেখানে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের। পরে ওই রাতেই থানায় তরুণীকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করে পুলিশ। সেখানে তরুণী জানান, তাকে ধর্ষণ ও অপহরণ করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় মাইক্রোবাসে চড়ে আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। তার এই রাতারাতি ভোল পাল্টানো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেও উত্তর মিলছে না কোথাও। তার পরিবার ও ঘটনা সংশ্লিষ্টরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।

ওই তরুণীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। শনিবার রাতে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয় ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে। তবে ওই চেয়ারম্যান ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ওই রাতে তরুণী সাংবাদিক ও পুলিশকে জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন অভিযুক্ত। ছয় বছর ধরে তাদের সম্পর্ক। মধুগ্রাম কলেজের এই সাবেক শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘মধুগ্রাম কলেজ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় পাশাপাশি। সেখানে পড়াকালে বিভিন্ন কারণে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছেন চেয়ারম্যান।’ পরে খুমেকের গাইনি ওয়ার্ড থেকে তরুণীকে পরীক্ষার পর ওই রাতেই হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠান চিকিৎসকরা। তখন ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বিষয়টি জানেন না বলে জানান তিনি।

শনিবার রাতে তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তার সঙ্গে গোলাম রসুল নামে ভাই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি ছিলেন। পরদিন রোববার সকালে ওই ব্যক্তিকে একদল লোক এসে নিয়ে যায়। এরপর ডুমুরিয়া থানার পুলিশ এবং খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা দফায় দফায় মেয়েটির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তখন হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার রাতেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন আলামত ও সংগৃহীত নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। ওসিসির কো-অর্ডিনেটর চিকিৎসক সুমন রায় জানান, মেয়েটিকে আমরা বলেছিলাম। আপনি চাইলে আমাদের মাধ্যমে আইনি সহায়তা নিতে পারেন অথবা থানায় নিজেই যেতে পারেন। বিকেল ৫টায় মেয়েটিকে তার মায়ের জিম্মায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

তখন সেখানে তাকে আইনি সহায়তা দিতে যাওয়া মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল ও সাংবাদিক ছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের গেটে তাদের সরিয়ে তরুণী ও তার মাকে দ্রুত একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয় একদল লোক। এরপর সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণীকে অপহরণ করার খবর প্রকাশিত হয়।

রোববার রাত ১২টার দিকে যশোরের কেশবপুর থেকে ওই তরুণীকে মাইক্রোবাসসহ উদ্ধার হওয়ার পর সোনাডাঙ্গা থানায় আনে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাড়ে ১২টায় মেয়েটিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়। তখন তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ধর্ষণের শিকার হননি। তাকে তার ভাই ও আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছিলেন। রোববার বিকেলে সেখান থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি গাড়িতে নিজেই রওনা দেন এবং যশোরের কেশবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এরপর পুলিশ তাদের খবর দেওয়ায় তারা থানায় এসেছেন।

কেন ওই দুজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেননি। নিজে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দাবি করে অতিরিক্ত প্রশ্ন করলে পাগল হয়ে যাবেন বলেও দাবি করেন।

সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী জানিয়েছেন—ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ তাকে ধর্ষণ করেননি। এ ছাড়া খুমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাকে কেউ অপহরণও করেনি। নিজেই এক আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন।

ওই তরুণীর মা রোববার রাতেই জানিয়েছেন, তার মেয়ে অপহৃত হননি। তিনি সুস্থ হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুর রহমান বলেন, ওই তরুণীকে সবার সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় মেয়েটিকে ভয় দেখিয়ে তার মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তদন্ত দাবি এইচআরএফবির: ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণীকে হাসপাতাল চত্বর থেকে অপহরণ এবং ফিরে এসে অভিযোগ অস্বীকার করায় উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। তারা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।

এইচআরএফবির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগে তোলা অভিযোগ অস্বীকারে ওই তরুণী ও তার পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে কি না এবং বিচারপ্রাপ্তির অধিকার খর্ব হচ্ছে কি না, তা নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে ওই তরুণী ও তার পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।