সারাদেশ: সিলেটের শাহপরাণ (রাহ.) মাজার এলাকায় সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে অসামাজিকতাবিরোধী আলেম-জনতার সঙ্গে ওরসপন্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ওই রাতের মারামারিতে আহত একজন হাসপাতালে মারা গেছেন বলে গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। মারা না যাওয়ার বিষয়টি শাহপরাণ মাজার ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছে। আহত একজনের রক্তাক্ত ছবি দিয়ে ভার্চুয়ালমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শুরু হয়। এর আগে সিলেটের আলেমসমাজ শাহপরাণ মাজার ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওরসের নামে অসামাজিকতা যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেন। এসব বৈঠকে কমিটির নেতৃবৃন্দ ওরসে কোনো অসামাজিকতা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম-সমাজের একটি প্রতিনিধি দল মাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখছিলেন। শেষদিন (সোমবার দিবাগত) রাতেও তারা এ লক্ষ্যে মাজারের মসজিদের সিঁড়িতে বসে কুরআন তিলাওয়াত ও গজল পরিবেশন করছিলেন। এসময় ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোক তাদের উপর হামলা করে মারধর শুরু করেন। হামলার শিকার মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এসময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন এসময়।
খবর পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র-শিক্ষককে উদ্ধার করেন এবং ওরসপন্থীদের উপর চড়াও হন। ওরসে আসা লোকজনের তাবুগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষে দুপক্ষর ৩০-৩৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হন অন্তত ৫ জন। পরে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে আলেম-সমাজের কয়েকজন সেসময় অভিযোগ করে বলেন- শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উত্তেজনা শুরু হওয়ামাত্র তারা সেখান থেকে চলে যায়। শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তারা ওরসে আসা মাদকসেবী ও মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোককে পরিস্থিতি অশান্ত করতে উস্কানি দিয়েছে। পরে তারা অতর্কিত আমাদের উপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের পরে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী সিলেটভিউ-কে বলেন- মাজারের ওরসে আসা কিছু পাগল, ফকির ও আলেম-সমাজের প্রতিনিধি দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিছু ভাঙচুর হয়েছে। তবে এখানে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ মাজারে হামলা করতে আসেনি। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। এ সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
রবিবার পর্যন্তও এ বিষয়ে মাজার কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। এ বিষয়ে শাহপরাণ মাজারের অন্যতম খাদেম আবদুল আহাদ সিলেটভিউ-কে বলেন- মামলা এখন পর্যন্ত করা হয়নি, তবে করা হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নির্দেশনা প্রয়োজন, আমরা তার অপেক্ষা করছি। কেউ মারা গেছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে খাদেম আবদুল আহাদ সিলেটভিউ-কে বলেন- না, কেউ মারা যায়নি। তবে এখনো দুজন ভক্ত ঢাকায় চিকিৎসাধীন। তাদের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলো, আমরা চিকিৎসাসহায়তা প্রদান করেছি। এ দুজনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র সিলেটভিউ-কে জানায়, সংঘর্ষের পর সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে আল-আমিন (৩০)-কে বেশ আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিলো। তবে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অথচ এ যুবকের রক্তাক্ত ছবি দিয়ে মারা গেছেন বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেটভিউ-কে বলেন- শাহপরাণ মাজারের ঘটনায় কেউ মারা যাননি। বিষয়টি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কঠোরভাবে দমন করবে পুলিশ। তিনি বলেন- গুজবের বিষয়টি আমরা খোঁজ নিচ্ছি, দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: সিলেট ভিউ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |