সারাদেশ: রাজধানী হাতিরঝিল থেকে জিটিভির সংবাদকর্মী রাহনুমা সারাহর (৩২) ভাসমান লাশ উদ্ধারের পর থেকেই তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় ‘অপমৃত্যুর’ মামলা হওয়ায় বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটির ধোঁয়াশাও কাটছে না। সাত বছর আগে বিয়ে করলেও বিষয়টি গোপন রাখা, চাকরির সিভিতে নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করা, দাম্পত্য জীবনে অসুখী থাকলেও সংসার চালিয়ে যাওয়া, হতাশার বিষয়ে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে শেয়ার না করাসহ নানা ঘটনার উত্তর মেলাতে পারছেন না স্বজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রাহনুমার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ ও তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও স্বামীর ফোন সিজ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাহনুমার বাসা থেকে তিনটি ডায়েরি ও একটি খাতা উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলোও বিশ্লেষণ করা হবে। এছাড়া রাহনুমার ফেসবুক বন্ধু ফাহিম ফয়সালের সঙ্গেও সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর স্বজন ও পরিচিতজনরা কেন তার সমস্যা জানতে আগ্রহ হয়নি সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে তার ভাড়া বাসা ও কর্মস্থল জিটিভিতে গিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টার দিকে পথচারীরা হাতিরঝিল লেকের পানিতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, অপমৃত্যুর মামলা হওয়ায় সেখানে সন্দেহভাজন হিসেবেও কাউকে আসামি করা হয়নি। ফলে স্বাভাবিক হত্যাকা- বা আত্মহত্যার তদন্তের মতো তদন্ত করা যাচ্ছে না। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সেখানে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ থাকবে। তখন সুনির্দিষ্টভাবে আগানো যাবে। এসআই আরও বলেন, গত শুক্রবার রাহনুমার কল্যাণপুরের বাসায় গিয়ে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়। বাসার ভেতরে দুটি আলমারি বই দিয়ে পূর্ণ ছিল। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুজনের অনেক কাপড়-চোপড় দেখা গেছে। তবে বাসায় নিয়মিত সেবন করে এমন কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাহনুমার বাসা থেকে তিনটি পুরনো ডায়েরি ও একটি খাতা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত্যুর আগের তিন দিনের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ ও স্বামী সাইফুল আলম শাহীনের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। ডায়েরির লেখা, ফুটেজ ও ফোনের দুজনের কথোপকথন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সেখানে দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কী ধরনের বক্তব্য রয়েছে, মৃত্যু নিয়ে কিছু লিখেছেন কি না, সেগুলো দেখা হবে।
জানা গেছে, রাহনুমা কল্যাণপুরের ওই বাসায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ভাড়া থাকেন। শুরুতে বাড়িটির চারতলায় ভাড়া থাকতেন। তবে সেখানে ভাড়া বেশি হওয়ায় তারা সাততলার চিলেকোঠায় ওঠেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাড়িটিতে ভাড়া থাকছেন। তবে বাড়িওয়ালা তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, রাহনুমাদের বিয়ের বিষয়টি স্বামীর পরিবার জানত না, তবে মেয়ের পরিবার জানত। এর কারণ হিসেবে বলেন, মাঝেমধ্যে রাহনুমার আত্মীয়দের কেউ কেউ খাবার নিয়ে সেখানে যেতেন। তবে কেউ বাসার ভেতরে ঢুকতেন না। গেটের বাইরে থেকে খাবার দিয়েই চলে যেতেন। বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীরা আরও জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কখনো ঝামেলা দেখেননি। দুজনের মধ্যে ভালো মিল ছিল। এছাড়া রাহনুমার হতাশার বিষয়েও তারা জানতেন না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা রাহনুমার বাবা ও সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। বাবা তদন্ত দলকে জানান, মেয়েটি বিয়ে করলেও কেন গোপন করেছিল সেটি বুঝতে পারছেন না। সাত বছর আগে বিয়ের কথা শোনার পর বাবা অবাক হয়ে যান। বাবা তদন্ত দলকে আক্ষেপ করে বলেন, কেমন বাবা হলাম যে, সন্তানের খবর পর্যন্ত জানি না। সাত বছর আগে বিয়ে করেছে অথচ এতদিনেও জানতে পারলাম না।
জিটিভির সহকর্মীদের কয়েকজন জানান, সাত বছর আগে বিয়ে করলেও অফিসে সিভিতে নিজেকে সিঙ্গেল উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকেও নিজেকে সিঙ্গেল লিখেছেন। বিয়ের বিষয়টি কেন গোপন করলেন, কেউ বুঝতে পারছেন না। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন। সহকর্মীদের সঙ্গে মেশার সময় খুব হাসিখুশি থাকতেন। সহকর্মীদের কয়েকজন বলেন, অফিস বা সহকর্মীরা তো কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারেন না। তবে নিয়মিত কাউন্সেলিং নিচ্ছিলেন সেটি জানতেন অনেকে। বিষয়টি ফেসবুকেও উল্লেখ আছে। রাহনুমার পরিচিত কয়েকজন বলেন, প্রেম করে বিয়ে করলেও শেষের দিকে দাম্পত্য জীবন নিয়ে সুখী ছিলেন না। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তবে জীবন নিয়ে খুব হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তার ফেসবুক পোস্টে ফাহিম ফয়সাল নামে এক যুবককে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তাতে নিজের জীবন শেষ করে দিতে যাচ্ছেন এমন ইঙ্গিত করেছেন। পোস্টের নিচে সেই যুবক কমেন্টসও করেছেন। অনেকে সেখানে সমালোচনা করে লিখেছেন, দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে তো কমেন্টস করেই দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা না। কেন এমন পোস্ট দিয়েছেন, সেটির কারণ বের করে তাকে সান্ত¡না দেওয়ার কথা। এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফ মিয়াজী জানান, এটি হত্যা না আত্মহত্যা সেটি স্পষ্ট নয়। এছাড়া মামলাতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তবে পুলিশ সম্ভাব্য সামগ্রিক সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। এছাড়া তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা বের হতে পারে।
সূত্র দেশ রূপান্তর
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |