
ক্যারিয়ারজুড়েই বিতর্ক তার নিত্যসঙ্গী। কখনো মাঠে আবার কখনো মাঠের বাইরে সাকিব আল হাসান নিয়মিতই বিতর্ক উপহার দিয়ে এসেছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। সর্বশেষ কোটা আন্দোলন ঘিরে সাকিবের নীরবতা এবং পারিবারিক ভ্রমণের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কানাডা গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে তিনি দেশে পর্যন্ত ফেরেননি। সরাসরি চলে গেছেন পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলতে।
অনেকদিন ধরে সাকিব ফর্মে নেই। ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে অবদান রাখতে পারছেন না। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে তামিম ইকবালকে ঘিরে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ সবচেয়ে শক্তিশালী, সেই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে নিদারুণ ব্যর্থতা অধিনায়ক সাকিবের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তামিমকে নিয়ে তার মন্তব্য দলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে স্বীকার করে নেন সাকিব। টুর্নামেন্টের মাঝে দেশে ফিরে মিরপুরে সমর্থকদের থেকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানও শুনতে হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল চোখের সমস্যা। সব মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থ সাকিব নেতৃত্ব ছাড়েন।
এর ছয় মাস পর গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাকিব ছিলেন বিবর্ণ। টুর্নামেন্ট চলাকালীন ভারতের সাবেক বিধ্বংসী ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ তাকে টি-টোয়নে্টি থেকে অবসরও নিতে বলেছিলেন; একবার নয়, একাধিকবার। সাকিব কোনো ফরম্যাট থেকেই অবসর নেননি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিবসহ বাকিদের পারফর্মেন্স বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। পরে জানা যায়, দল নাকি সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য খেলেনি। স্রেফ ম্যাচটা জিততে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচও জিততে পারেনি।
সেই আসর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর ক্রিকেট লিগ আর কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে দেশ ছাড়েন সাকিব। যাওয়ার আগে বলে যান, এই দুটি টুর্নামেন্টে নিজেকে যাচাই করে অবসর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দুটি আসরেই তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হন দল থেকে বাদও পড়েন। সাকিব যখন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলছেন, তখন দেশে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। যেটা একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার এবং বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা মুখ খুললেও আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সাকিব একটা টু শব্দও করেননি। তার বিপুল সংখ্যক তরুণ ভক্তরা এতে ভীষণ আশাহত হয়।
স্টেডিয়ামের সামনে প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যানারে এসব দাবি জানান সমর্থকরা। তবে রাজনৈতিক বিচারে দল নির্বাচন আইসিসির আইনের সম্পূর্ণ বিরোধী। সাকিব পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের দলে সুযোগ পান। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফুল হকের মতে, মেধার বিচারেই সাকিবকে দলে নেওয়া হয়েছে। তার রাজনৈতিক অবস্থান বিচারের কোনো সুযোগই নেই। একইসঙ্গে ক্রিকেট ক্যারিয়ার চলাকালীন রাজনীতি করা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচক।
দেশে যখন অসংখ্য তরুণ গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে যাচ্ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাকিবকে তখন দেখা যায় পরিবার নিয়ে মহানন্দে সাফারিতে ঘুরছেন। এই ছবিটিই তার জনপ্রিয়তার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। সাকিব নিকট ভবিষ্যতে আর দেশে ফিরবেন কিনা- সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। যদিও প্রধান নির্বাচকের কাছে তিনি বলেছেন, এ বছর দেশের হয়ে সবগুলো টেস্টই তিনি খেলতে চান। বিপিএল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ন্সের মালিক নাফিসা কামালের সঙ্গে পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে পড়াও সাকিবকে বিব্রত করে। এমনকী তার বিবাহবিচ্ছেদের গুজবও ছড়ায়!
এমন ঘটনাপ্রবাহের মাঝে সাকিব পাকিস্তানে গিয়ে দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছেন। ২১ তারিখ থেকে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সাকিব যখনই প্রবল সমালোচিত হয়েছেন, তখনই তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। গত দুটি বিশ্বকাপ বাদ দিলে তিনি বারবার সমালোচনা বন্ধ করেছেন মাঠের পারফর্মেন্স দিয়ে। হয় ব্যাটিংয়ে, নয়তো বোলিংয়ে কিংবা অল-রাউন্ড পারফর্মেন্স দিয়ে সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে আরও একবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন সাকিব? পাকিস্তানের পেস স্বর্গে কাজটা কিন্তু ভীষণ কঠিনই হবে।