প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ সমাজ যা দেখতে চায় সেটাই দেখাতে হবে

সমাজ যা দেখতে চায় সেটাই দেখাতে হবে

তাসনিম জারার গল্প:
“আমার বিয়ের রিসেপশনে আমি উপস্থিত হয়েছিলাম আমার দাদির সাদা সুতির শাড়ি পরে, মুখে একটুও মেকআপ না করে, গায়ে কোনো গয়না ছাড়াই। অনেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কেন?’ এই লেখাটি তাদের জন্য।”

আমাকে সবসময় ভাবিয়েছে, আমাদের সমাজে একটি বউয়ের ছবি যেন একরকমই—গা ভর্তি মেকআপ, ভারি জামা আর গয়নার স্তর স্তর ভারে যেন সে নিজেই হারিয়ে যায়। কিন্তু এই বিলাসিতা আসলে নারীর আর্থিক অবস্থান বা তার ইচ্ছার প্রতিফলন নয়। বরং অনেক সময় এটা ঘটে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে—যেন সমাজ ঠিক করে দিয়েছে, একজন নারীর জন্য যদি টাকা খরচ করতেই হয়, তাহলে সেটা এমন কিছুতে করব যা তার কোন উপকারে আসবে না।

আমি এমন কোনো বিয়েতে যাইনি যেখানে মানুষ ফিসফিস করে বলেনি—”বউটা দেখতে কেমন?” “গায়ে কত সোনার গয়না?” “জামাটা কত টাকার?”

এই প্রশ্নগুলোর ভেতর বড় হয়ে ওঠা মেয়েরা যেন শিখে ফেলে, তাকে সবচেয়ে ভালো মেকআপ আর্টিস্ট খুঁজতে হবে, হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হবে, আর সে যেন নিজেকে না, বরং সমাজ যা দেখতে চায় সেটাই দেখাতে হবে।

তার খালা-ফুপু থেকে শুরু করে কর্পোরেট দুনিয়া পর্যন্ত সবাই যেন তাকে বোঝায়—একজন বউ পূর্ণ হয় না সোনার গয়না ছাড়া, মেকআপ ছাড়া, দামি শাড়ি ছাড়া। যেন তার এবং তার পরিবারের সম্মান নির্ভর করে তার গায়ে থাকা সোনার ওজনের উপর।

আর বউ হয়ে উঠতে হলে তাকে পরতে হবে একটা অস্বাভাবিক দামি ও ভারি শাড়ি—যেটা পরে হাঁটা চলা কঠিন, বিয়ের পর আর কোনো কাজে লাগে না। কিন্তু সমাজ মানবে না অন্য কিছু।

আমি ভুল বুঝবেন না—যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় মেকআপ করে, গয়না পরে, দামি জামা পরে, আমি শতভাগ সমর্থন করি।
কিন্তু সমস্যা তখনই, যখন একজন মেয়ে তার নিজের বিয়েতে কী পরবে, সেটা নিজে ঠিক করতে পারে না।
যখন সমাজ তাকে বলে—’তুমি যেমন আছো, সেটা তোমার বিয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।’
আমি মনে করি এই মানসিকতা বদলানো দরকার।

একজন মেয়েকে সমাজে স্বীকৃতি পেতে, আত্মবিশ্বাস পেতে কোনো ফর্সা করার ক্রিম, সোনার গয়না বা দামি জামার দরকার নেই। তাই আমি এসেছিলাম আমার দাদির শাড়ি পরে, কোনো মেকআপ ছাড়া, গয়না ছাড়া। অনেকে বলবে “সাধারণ”, কিন্তু আমার কাছে এটা ছিল অসাধারণ—কারণ এর পেছনে ছিল আমার বিশ্বাস, আমার অবস্থান। এই সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে। কিছু আত্মীয় বলেছেন—আমি বউয়ের মতো সাজিনি, তাই তারা আমার সাথে ছবি তুলবেন না।
তবে কৃতজ্ঞতা জানাই যাঁরা আমাকে সমর্থন করেছেন, আর বিশেষ কৃতজ্ঞতা এই মানুষটির প্রতি—খালেদ, যিনি নিঃশর্তভাবে আমার পাশে থেকেছেন এবং গর্বভরে আমার চোখে চোখ রেখে বলেছেন—”ভালো করেছো।”