প্রচ্ছদ সারাদেশ সব সময় মনে হতো এখনই গুলি করে মেরে ফেলবে: ব্যারিস্টার আরমান

সব সময় মনে হতো এখনই গুলি করে মেরে ফেলবে: ব্যারিস্টার আরমান

সারাদেশ: শ্বাস বন্ধ করে বন্দুকের গুলির অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছিলাম এখনই একটি গুলি এসে ছিন্নভিন্ন করবে আমায়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তেমন কিছু হয়নি। দীর্ঘ আট বছর পর পেলাম বাইরের আলো-বাতাসের ছোঁয়া। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম আরমান এভাবে তার আয়নাঘরে থাকার ও মুক্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ৫ আগস্ট মুক্ত হয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে তাকে হত্যা করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভেতরে থেকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন তিনি। গুলি করার বদলে ঐ দিন ঢাকার উপকণ্ঠে দিয়াবাড়ীতে একটি কর্দমাক্ত জায়গায় গাড়ি থেকে জীবিত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় ৪০ বছর বয়সী এ আইনজীবীকে।

২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আরমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মিরপুর ডিওএইচএসের ১১ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ৫৩৪ নম্বর বাড়ির থেকেই দুই শিশুসন্তান, স্ত্রী ও বোনের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরিবারকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল, তাকে আটকের বিষয়ে যেন কাউকে কিছু না বলা হয়। আরমান আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবাকে ফাঁসি দেওয়ার কয়েক দিন আগে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফিরে বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তখন গণমাধ্যমে বিভিন্ন কথা বলছিলেন তিনি। বিচার নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগও তুলছিলেন। তবে এসবের জন্য তাকে গুম হতে হবে এটা ভাবেননি তিনি।

তিনি জানান, তাকে আটকে রাখা হয়েছিল জানালাবিহীন একটি ঘরে। সেখানে উচ্চস্বরে গান বাজত। দিনরাত তারিখের কোনো হিসাব ছিল না তার কাছে। বিকট শব্দের গানবাজনা বন্ধ হলে এখানে অন্য বন্দিদের আর্তনাদ শুনে বুঝতে পারতেন, এ বন্দিশালায় আরও অনেকে আছে। আজান শুনে দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতেন। আরমান বলেন, সব সময় তার হাতে হাতকড়া আর চোখ বাঁধা থাকত। মনে হতো এখনই হয়তো গুলি করে মেরে ফেলবে। হাতকড়ার ঘষায় ঘষায় হাতে পচন ধরে গিয়েছিল। বন্দিজীবনে তাদের পচা-বাসি খাবার দেওয়া হতো। প্রথম প্রথম খেতে পরাতেন না। রোজা রাখলে বুট-ঘুগনি আর পেঁয়াজু দেওয়া হতো। আর রাতের খাবার ও সেহরির জন্য দুটি রুটি। তিনি জানান, পচা খাবার থেকে বাঁচার জন্য লাগাতার রোজা রাখতেন। এ রোজা নিয়ে উপহাস করত ওরা। কখনো কখনো এমনও হয়েছে, পরপর তিন দিন কেবল একটা করে পেঁয়াজু খেয়ে ইফতার করতে হয়েছে। অনেক বার একটা কোরআন চেয়েছেন পড়বেন বলে। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি। আরমানকে গুম করার চার সপ্তাহ পর মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু সে খবর আরমান জানতে পারেন আরও তিন বছর পর। সেখানকার এক রক্ষী ভুলক্রমে তাকে জানিয়ে দেন। আরমান জানান, মুক্ত হয়ে তিনি ইবনেসিনায় যান। সেখানে এক জনকে তার পরিচয় দেন। তারপর যোগাযোগ হয় তার পরিবারের সঙ্গে। পরিবারকে তার মুক্তির বিষয় নিশ্চিত করা হয়। নিজের মুক্ত জীবনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান ব্যারিস্টার আরমান।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।