
সবশেষে বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে এগিয়ে যারা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের বিএনপি দুর্গখ্যাত এ আসনে প্রায় এক বছর ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা নিয়মিত হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আল-মুজাহিদ মল্লিক। পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির নেতা তুহিন মাহমুদ। বিএনপি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, মনোনয়ন যুদ্ধে এক ধাপ এগিয়ে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান।
তাদের মতে, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলনমুখী রাজনীতির প্রতিটি ধাপে মান্নান ছিলেন সামনের সারিতে। এক-এগারো সরকারের সময় তিনি ছিলেন সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতৃত্বের অন্যতম মুখ। সেই সময়কার নির্যাতন, গ্রেপ্তার, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা রাজপথে থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন সচল রেখেছিলেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, দীর্ঘ রাজপথের লড়াইয়ে মান্নান ও তার ছেলে খায়রুল ইসলাম সজীব—দুজনেই এখন পর্যন্ত ৮০টির বেশি মামলার আসামি। একাধিকবার কারাগারে গিয়েও তিনি কখনো আপস করেননি। অনেক সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন, পরিবারগুলোকে সহায়তা করেছেন। এ কারণেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বেশি। আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘রাজনীতির শুরু থেকেই আমি বিএনপির কর্মী ও সমর্থক। দলের দুঃসময়ে আমি কর্মীদের পাশে থেকেছি, তাদের খোঁজখবর নিয়েছি।
যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জকে আধুনিক, শিক্ষিত ও কর্মসংস্থানের শহর হিসেবে গড়ে তুলব। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ পরিবর্তন চায়, আর সেই পরিবর্তনের প্রতীক হবে ধানের শীষ।’ অন্যদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএনপি গণমানুষের দল। সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষের সুখ-দুঃখে সবসময় থাকার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, ‘সোনারগাঁবাসী আমাকে ভালোবাসেন। সিদ্ধিরগঞ্জ নতুনভাবে যুক্ত হওয়ায় সেখানে কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষকে বিজয়ী করব।’ জামায়াত নেতা ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, ‘সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আশা করি তারা দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করবেন।’ জাতীয় যুবশক্তির নেতা তুহিন মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন ও তরুণ নেতৃত্ব চায়।
জনগণের মতামত নিয়ে আমরা কাজ করছি। তরুণদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখানে আজহারুল ইসলাম মান্নান সাংগঠনিক ঐক্য ও নেতৃত্বের যোগ্যতা নির্ধারণ করে। দলের জন্য মান্নানের যে ত্যাগ, সেদিক থেকে দেখলে বিএনপি তাকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত করবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৮৭ হাজার ২০৪ জন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এ আসনে বিএনপি চারবার, জাতীয় পার্টি চারবার এবং আওয়ামী লীগ দুইবার জয়ী হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির ভেতর যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা শেষ পর্যন্ত কাকে বেছে নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব—সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জের ভোটাররা।