দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখই বেশি আসতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তাঁদের দলের হয়ে ৩৫-৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। এর মধ্যে দু-একজনের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীনেত্রীরা আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় ও নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রত্যাশীরা নিজেদের জীবনবৃত্তান্তও নেতাদের কাছে জমা দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে একটা বড় সংখ্যায় মনোনয়ন পান পিতা বা স্বামীর অবদানের কারণে।
জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের বাইরে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের আসন ২২৩টি। এরপরই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন। এর মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থক। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভাগে পাওয়া সংরক্ষিত আসনগুলোতেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে এবং তা নিশ্চিত করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। আগামীকাল রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের যোগ করলে এবার আওয়ামী লীগের ভাগে পড়বে কমবেশি ৪৭ জন সংরক্ষিত নারী আসন। একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন ৪৩ জন।
সংরক্ষিত সদস্য বাছাই করার সঙ্গে অতীতে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনোদের মধ্যে বেশির ভাগই বাদ পড়বেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ভাগ থেকে ১৪ দলের শরিকদের পছন্দের তিন-চারজন নারীকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে একটা বড় সংখ্যায় মনোনয়ন পান পিতা বা স্বামীর অবদানের কারণে। বিশেষ করে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে এমএনএ ছিলেন, এমন নেতাদের পরিবারের সদস্যরা গুরুত্ব পান। ১৯৭৫–পরবর্তী সময়ে দলে ভূমিকা রেখেছিল, এমন পরিবারের সদস্যদেরও সংসদ সদস্য করা হবে। এ ছাড়া ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দায়িত্ব নেওয়ার পর যাঁদের পাশে পেয়েছিলেন, এমন নারীনেত্রীদের কেউ কেউ জায়গা পাবেন।
আগামী মাসের শুরুতে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় ফরম বিক্রি শুরু হবে। এরপর সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক বসবে।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনগুলোতে কাকে কাকে সংসদ সদস্য করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছেন। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর মন্ত্রিসভায় আরও কিছু নতুন নাম যুক্ত করা হতে পারে।
গত সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৪৩টি। এর মধ্যে খাদিজাতুল আনোয়ার, রুমানা আলী, সুলতানা নাদিরা ও তাহমিনা বেগম এবার সরাসরি আসনে জয়ী হয়েছেন। বাকি যে ৩৯ জন আছেন, এর মধ্যে অল্প কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। বাকি সবাই নতুন হবেন।
বিবেচনায় থাকবে যে বিষয়
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। যেমন যাঁরা জোট বা দলের অন্যদের সুযোগ করে দিতে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। এ বিবেচনায় রয়েছেন সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। তিনি এবার জাতীয় পার্টির কারণে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করতে না পারেননি।
বিনোদনজগৎ, লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকে অন্তত দুজনকে স্থান দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাকী ইনামসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকেও দু-তিনজন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে। বিগত সংসদে আরমা দত্ত, বাসন্তী চাকমা ও গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আরমা দত্ত আবারও থেকে যেতে পারেন বলে দলে আলোচনা আছে।
এ বিবেচনায় রয়েছেন সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। তিনি এবার জাতীয় পার্টির কারণে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করতে না পারেননি।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে একটা বড় সংখ্যায় মনোনয়ন পান পিতা বা স্বামীর অবদানের কারণে। বিশেষ করে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে এমএনএ ছিলেন, এমন নেতাদের পরিবারের সদস্যরা গুরুত্ব পান। ১৯৭৫–পরবর্তী সময়ে দলে ভূমিকা রেখেছিল, এমন পরিবারের সদস্যদেরও সংসদ সদস্য করা হবে। এ ছাড়া ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দায়িত্ব নেওয়ার পর যাঁদের পাশে পেয়েছিলেন, এমন নারীনেত্রীদের কেউ কেউ জায়গা পাবেন।
গত সংসদে যেসব জেলা থেকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হয়নি, সেসব জেলা এবার অগ্রাধিকার পাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
গত সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৪৩টি। এর মধ্যে খাদিজাতুল আনোয়ার, রুমানা আলী, সুলতানা নাদিরা ও তাহমিনা বেগম এবার সরাসরি আসনে জয়ী হয়েছেন। বাকি যে ৩৯ জন আছেন, এর মধ্যে অল্প কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। বাকি সবাই নতুন হবেন।
কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠন
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নারী নেত্রী সরাসরি আসনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগেও অনেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তাঁদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ মনোনয়ন পেয়েও নাগরিকত্ব জটিলতায় সরাসরি আসনে নির্বাচন করতে পারেননি। তাঁকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করার কথা আলোচনায় আছে। অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান গত সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। তাঁকে এবারও রেখে দেওয়া হতে পারে। শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানার নামও এবার আলোচনায় রয়েছে।
বিনোদনজগৎ, লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকে অন্তত দুজনকে স্থান দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাকী ইনামসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগে।
কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে মারুফা আক্তার পপি মনোনয়ন চেয়ে পাননি। আরও আছেন আখতার জাহান, পারভীন জামান, তারানা হালিম, মেরিনা জাহান, সফুরা বেগম, সানজিদা খানম ও হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এর মধ্যে তিনজন গত সংসদে সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সানজিদা খানম দলের মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা-৪ আসন থেকে হেরে গেছেন। তাঁকে আর সুযোগ দেওয়া না–ও হতে পারে। অধ্যাপক মেরিনা জাহান গত সংসদে সদস্য থাকলেও তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের প্রতিনিধি হয়ে সফর করেছেন। তিনি এবারও থাকতে পারেন বলে দলে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া দলের নির্বাহী সদস্য থেকেও চার-পাঁচজনকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা আছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
১৪ দলের শরিকেরা বিবেচনায়
১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি (জেপি)—এই তিন দল সমঝোতার মাধ্যমে ছয়টি আসন ভাগে পেয়ে মাত্র দুজন জয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, শরিকেরা নিজেদের দুই আসন দিয়ে সংরক্ষিত আসন ভাগে পাবে না। শরিকদের মধ্য থেকে তিন-চারজনকে আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া একবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হলেও তিনি কখনো সংসদ সদস্য হতে পারেননি। এমনকি তাঁকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়ও দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক গত সংসদের শেষ দিকে সদস্য হয়েছিলেন। এবার হাসানুল হক ইনু নিজে ভোটে হেরে গেছেন। আবার দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবার সমঝোতার আসন ভাগে পাননি। তাঁকেও আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য করার আশ্বাস ছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এই দুজন বা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে সদস্য করা হতে পারে।
জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভোটে হেরে গেছেন। তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের কাউকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জয়ী হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান গত সংসদে সংরক্ষিত সদস্য ছিলেন। এবার তাঁকে করা হবে নাকি অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে—এটি এখনো স্পষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে নানা শ্রেণি-পেশার সম্মিলন থাকবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, দলের প্রতি অবদান কী, তা গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |