প্রচ্ছদ জাতীয় শেষ ফেসবুক পোস্টে ওসমান হাদির বার্তা

শেষ ফেসবুক পোস্টে ওসমান হাদির বার্তা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ইন্তেকালে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বইছে গভীর আবেগ। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুর ঠিক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া তার শেষ পোস্টটি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই নিজের ফেসবুক পেজে শেষবারের মতো লিখেছিলেন হাদি। সেই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।’ তার এই সংক্ষিপ্ত অথচ তীক্ষ্ণ মন্তব্য এখন অনেকের চোখে শেষ বার্তার মতোই ধরা দিচ্ছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের আঙুলিয়া মসজিদে হাদির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেলে তার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশে পৌঁছানোর পর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ জানান, শহীদ হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি শুক্রবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করবে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটির সম্ভাব্য অবতরণের সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট।

ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগসহ রাজধানীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় তাদের। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতের আগ্রাসন ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা বলব’—এমন নানা স্লোগানে রাজপথ মুখর করে তোলেন।

শরিফ ওসমান হাদি, যিনি ওসমান হাদি নামেই বেশি পরিচিত, জুলাই শহীদদের অধিকার রক্ষা, আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সক্রিয় রাজনীতির মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১৯৯৩ সালে জন্ম নেওয়া শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। তার আকস্মিক মৃত্যু দেশের রাজনীতিতে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন সহকর্মী ও সমর্থকরা।

সূত্র : জনকণ্ঠ