
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত চারুকলা প্রদর্শনীতে কয়েকটি চিত্রকর্ম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া একাধিক চিত্রকর্মে দাঁড়িপাল্লা থাকায় তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।
গত বছর জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্যালুট দেওয়া আলোচিত রিকশাচালকের ছবির এক হাতেও দাঁড়িপাল্লা যুক্ত করা হয়েছে। দাবার ছকের একটি ছবির মধ্যেও দেখা গেছে দাঁড়িপাল্লা।
তবে চিত্রশিল্পী ও আয়োজকরা বলছেন, দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক, কোনো দলীয় প্রচার নয়।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে ১৫ দিনব্যাপী এই চারুকলা প্রদর্শনী শুরু হয়। তবে উদ্বোধনের প্রথম দিনই বিভিন্ন চিত্রকর্ম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা দাবি করছেন, প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাইকে আর কত ছোট করবে? ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।’ প্রায় একই রকম পোস্ট করেছেন চবি ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন।
চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ছবিটি বিকৃত করা হয়েছে।
মূল ছবিতে দাঁড়িপাল্লা ছিল না। এখন যদি জামায়াতের প্রতীক হিসেবে কিছু যোগ করা হয়, সেটা তো পরিষ্কার প্রচারণা। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো লেজুড়ভিত্তিক সম্পর্ক নেই। ক্যাম্পাসে কোনো প্রচারণাও করি না। তাহলে জামায়াতের প্রতীক কেন আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা প্রদর্শনীর আহ্বায়ক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ছবি যাচাই-বাছাই করার সময় আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখিনি।
আমরা শিল্পীর স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এখন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, রাতে বৈঠক ডেকেছি। ছবিটির নাম ছিল জাস্টিস ইন দ্য পিপলস হ্যান্ড। আমরা ছবিতে কোনো দাঁড়িপাল্লা দেখিনি, শুধু শিরোনামের ভিত্তিতেই অ্যাকসেপ্ট করেছি। তবে দোষ আমার, আমি আহ্বায়ক হিসেবে দায় নিচ্ছি, কমিটির নয়।’
এসব অভিযোগ একপ্রকার ‘বিভ্রান্তি’ বলে মনে করছেন রিকশাচালকের ছবির শিল্পী মেহেদী হাসান শুভ্র। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী ছবিটি আঁকেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টির পরবর্তীতে পোস্ট করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণা ছিল সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকা লেডি জাস্টিস ভাস্কর্য। সেখানে দাঁড়িপাল্লা ছিল ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে। আমি তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এ ছবি এঁকেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচার নয়। আমি তো জুলাইয়ের সমর্থনে ছিলাম। এই চিত্রের মাধ্যমে জনগণের হাতে বিচার প্রতিষ্ঠার বার্তা দিতে চেয়েছি। এত সমালোচনা হবে বুঝিনি।’
প্রদর্শনী নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘চারুকলা প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার জন্য কাজ জমা দেয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাউকে দাঁড়িপাল্লা আঁকার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত, এখানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছিল না।’