শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দলের বিষয়ে যে রিউমার বা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই শুনতে চাচ্ছে আমাদের থেকে। এটা আমরা এর আগেও স্পষ্টভাবে বলেছি, এখনই কোনো রাজনৈতিক দল খোলার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই। এই অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, কারোরই ক্ষমতার অভিলাষ নেই। সবারই পেশাগত জীবন আছে, সবাই সেখানে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দায়িত্ব এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে, সেটি যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, যে সংস্কারের কথা আমরা বলছি, সেটা ছিল এক দফারই অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; কিন্তু এক দফার যে মূল অংশ, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ—সেই ব্যবস্থার বিলোপের জন্য যে সংস্কারগুলো অত্যাবশকীয় সেগুলো করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এটা জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের জন্য কিংবা ক্ষমতার পালাবদলের জন্য অভ্যুত্থানের জন্য আসেনি। যদি আসতো সেটা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আসত বলে আমি মনে করি। এই অভ্যুত্থান হয়েছে স্পষ্টভাবেই ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপের জন্য।’
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি যে ব্যবস্থাটা বিদ্যমান আছে, এটা সংস্কার না করে দিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমরা মনে করি সরকারই ক্ষমতায় আসুক, যেকোনো রাজনৈতিক সরকার এই অটোক্রেটিক একটা সিস্টেমের মধ্যে সে নিজেও অটোক্রেটিক হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। সে কারণে আমরা মনে করি—এই সংস্কার অত্যাবশকীয়। দেশের জনগণ যেভাবে দেশকে গড়তে চাইবে, দেশ পুনর্গঠনের যে প্রস্তাবনা দেশের মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসবে, সেটার বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব হবে।
এই সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরইমধ্যে বসা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আছেন, তিনি এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান— এ দুজনের নেতৃত্বে আমাদের একটি টিম করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রেগুলার বেসিসে বসছেন। অফিসিয়াল বসার বাইরেও আন–অফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছেন, যাতে আমাদের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। দেশ পুনর্গঠনের এই যাত্রায় রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।
গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, রোববার থেকে আজ মঙ্গলবার, এই সময়টাতে কিন্তু গত সপ্তাহের তুলনায় যে আনরেস্ট ছিল সেটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায়, খুব স্পেসিফিক দুই-তিনটা কারখানায় এখন আনরেস্টের মতো সিচুয়েশন আছে। সেটাও আমরা মনে করি দ্রুতই প্রশমন হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়া নিয়েও প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, অভ্যুত্থানের পর আমি এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব সেটা পালন করছি। যারা এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা মনে করছেন দেশ পুনর্গঠনের যে লড়াইটা সামনে আছে, সেই লড়াইয়ে দেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন করতে হলে জনগণের কথা শুনতে হবে। সেই কারণে তারা সব জায়গায় টিম করে যাচ্ছেন এবং মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছেন। সেখানে কিছু পরিস্থিতির কথা আমি শুনতে পাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে এটা পুরোনো কালচার। যেকোনো ভালো উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু মানুষ তো থাকেই। সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক ভুয়া, অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন। যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর কথা আমরা বলি, তারপরই অনেকে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা করছেন। আমরা মনে করি, এগুলোর অবসান ঘটবে। আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল, তা থাকবে এবং তার মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম খান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুূত্রঃ ডেইলি-বাংলাদেশ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |