প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নি’হ’তের সংখ্যা, এখন পর্যন্ত ৮০০ ছাড়িয়েছে

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নি’হ’তের সংখ্যা, এখন পর্যন্ত ৮০০ ছাড়িয়েছে

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। অল্প সময়ের ব্যবধানেই একের পর এক নাম যোগ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে।

গত রাতে আঘাত হানা স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে এরই মধ্যে ৮০০ অতিক্রম করেছে নিহতের সংখ্যা। সেইসঙ্গে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন ধ্বংসাত্মক এ ভূকম্পনে। আরও অনেক মৃত্যুর খবর আসতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে আল জাজিরা।

এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানের সরকারের মুখপাত্র মৌলভি জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ হয়েছে ছাড়িয়েছে। আর আহতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উদ্ধার এখনও কাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে, স্থানীয় সময় রোববার (৩১ আগস্ট) গভীর রাতে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে ভূমিকম্পটি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রোববার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর থেকে অন্তত আরও ১৩ বার ‘আফটার শক’ অনুভূত হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ২-এর মধ্যে।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এর আগে এত ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেননি তারা।

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলও, যা কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়।

এই ভূমিকম্পটি বিশেষভাবে ভয়াবহ ছিল কারণ এটি মাত্র ৫ মাইল গভীরতায় আঘাত হানে, এমনকি মাঝারি মাত্রার ক্ষেত্রেও এটি আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশের নুর গুল জেলা। এছাড়া প্রদেশের সাওকি, ওয়াটপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলায়ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

আফগানিস্তানের দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বলছে, হতাহতদের সংখ্যা চূড়ান্ত নয়, কারণ কর্মকর্তারা এখনও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

ভূমিধসের কারণে সাওকি জেলার দেওয়া গুল এবং নুর গুল জেলার মাজার দারা যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধারকারী দলগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে অসুবিধা হচ্ছে।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও অনেক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান এক বিবৃতিতে বলেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মূলত, ভৌগলিক কারণেই মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান বেশ ভূমিকম্পপ্রবণ। দেশটি এমন বেশ কয়েকটি ফল্ট লাইনের ওপরে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত তিন দশকে কেবল ভূমিকম্পের কারণে আফগানিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের।

১৯৯১ সালে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে হওয়া এক ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ৮৪৮ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

এরপর ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের প্রদেশ খোরাসানের কায়েন শহরে ৭ দশমিক ২ মাত্রার এক ভূমিকম্পে দুই দেশে প্রাণ হারিয়েছিলেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ; সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ১০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি।

পরের বছরই ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের প্রায় বিচ্ছিন্ন ও তাজিকিস্তানের সীমান্তবর্তী উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ তাখারে ভয়াবহ আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার শিকার হয়ে আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানে প্রাণ হারান প্রায় ৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে আফগানিস্তানে নিহতের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০।