বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পরদিনই বড় ধস নেমেছে স্বর্ণের দামে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) একদিনে স্বর্ণের মূল্য ২ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। খবর রয়টার্সের।
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২.৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৫৬ ডলার ১৯ সেন্টে। এর আগের দিন, সোমবার (২০ অক্টোবর) ইতিহাস গড়ে স্বর্ণের দাম পৌঁছেছিল সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ২১ সেন্টে। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ফিউচারও ২.১ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৬৯ ডলার ৬০ সেন্টে লেনদেন হয়।
উইজডমট্রির পণ্য বিশেষজ্ঞ নিতেশ শাহ বলেন, “স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে, তবে সাম্প্রতিক উত্থান ছিল অত্যন্ত দ্রুত। ফলে নতুন রেকর্ড গড়ার পর বাজারে কিছুটা স্বাভাবিক সংশোধন দেখা দিয়েছে।”
চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধি এসেছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা ও যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা থেকে।
বাজারের নজর এখন শুক্রবার প্রকাশিত হতে যাওয়া মার্কিন ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) রিপোর্টের দিকে। সেপ্টেম্বরের মুদ্রাস্ফীতি ৩.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সপ্তাহে ০.২৫ শতাংশ সুদের হার কমাতে পারে এমন প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। সাধারণত সুদের হার কমলে স্বর্ণের মতো সুদবিহীন সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কমার ইঙ্গিত এবং জাপানে সানায়ে তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবরে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউানোভো জানান, অনেক বিনিয়োগকারী এখনও স্বর্ণের সাম্প্রতিক উত্থানে অংশ নিতে পারেননি। দাম সামান্য কমে আসায় নতুন করে তারা বিনিয়োগে প্রবেশ করতে পারেন, যা বড় ধরনের পতন রোধে ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও পতন হয়েছে। রুপার দাম ৪.৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৫০ ডলার ৩১ সেন্টে, প্লাটিনাম ৩.৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫৮৩ ডলার ৩৮ সেন্টে এবং প্যালাডিয়াম ৪.৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৩০ ডলার ০৪ সেন্টে নেমে আসে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে লন্ডনের স্পট মার্কেটে রুপার সরবরাহ বাড়ায় বৈশ্বিক তারল্য সংকট কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
দেশের বাজারে বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪ টাকা।
অন্যদিকে দেশে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫ হাজার ৭৪ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ৩ হাজার ৮০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
