প্রচ্ছদ সারাদেশ রক্তমাখা জামার সূত্র ধরে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর আমিনুর হত্যার রহস্য

রক্তমাখা জামার সূত্র ধরে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর আমিনুর হত্যার রহস্য

সারাদেশ: সম্প্রতি গাছ থেকে সজনে পাড়তে দেখে ফেলায় মৎস্য ঘের মালিক মো. আমিনুর শেখকে (৪৪) হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সজনে বাগানে রেখে যাওয়া রক্তমাখা জামার সূত্র ধরে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- বটিয়াঘাটা উপজেলার ফরিদুল্লাহ ওরফে ফরিদ, শাহীন মোড়ল, নয়ন শেখ, মো. ফারুক শেখ ও আলী মুনসুর মোড়ল। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৯ মার্চ সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘরা গ্রামের একটি বাগান থেকে আমিনুর শেখের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানায় মামলা হয়। তিনি জানান, ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম দ্রুত সময়ে এই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করেছে। আমিনুর শেখ কৃষিকাজ ও মৎস্য ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং তার মৎস্য ঘেরের আইলে একটি সজনে বাগান রয়েছে। তিনি গত ১৫ মার্চ রাতের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় ১৭ মার্চ বটিয়াঘাটা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। একই দিন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম ভদ্রা নদীর পাড়ে ঘেরের বেড়ার ভেতরে রক্ত মাখা একটি জামা উদ্ধার করে। এই রক্ত মাখা জামার সূত্র ধরেই পুলিশ অভিযান শুরু করে।

এ ঘটনায় ২০ মার্চ ভোর রাতের দিকে সন্দেহভাজন ফরিদুল্লাহ শেখ ওরফে ফরিদকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রক্ত মাখা জামাটি তার বলে জানায়। ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে ফরিদ জানায়, ঘটনার দিন ফরিদ, শাহিন, নয়ন ও ফারুক রাত সাড়ে ৭টার দিকে শাহিনের বাড়ির পেছনে কচুবাগানে বসে গাঁজা খায়। এরপর ফরিদ, শাহিন এবং নয়ন ৩ জন মিলে আমিনুরের ঘেরে চুরি করে সজনে পাড়তে যায়। ফরিদ সজনে পাড়তে গাছে উঠে। তখন শাহিন এবং নয়ন গাছের নিচে অবস্থান করে। তারা দুইজনে সজনে কুড়িয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরতে থাকে। হঠাৎ আমিনুর টর্চ লাইট মারে এবং তাদের দেখে ফেলে। তখন আমিনুর তাদের ধাওয়া দেয়। তারা সজনে ফেলে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। এর এক-দেড় ঘণ্টা পরে তারা ৩ জনে ওঁৎ পেতে থাকে আমিনুরের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর আমিনুর ঘেরের টং ঘরে ঢুকতে গেলে প্রথমে নয়ন পেছন থেকে মাফলার দিয়ে নাকে মুখে প্যাচ দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর ফরিদ এবং শাহিন হাত-পা ধরে ভদ্রা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়।

পরে শাহিনের সঙ্গে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে ফরিদ প্রথমে মুখের চোয়ালে একটা বাড়ি দেয়। সেই আঘাতের কারণে রক্ত ছিটকে ফরিদের জামায় লাগে। তখন তারা লোহার রড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তাদের মারধরে একপর্যায়ে আমিনুর মারা যায়। তখন ফরিদ ভয়ে তার রক্ত মাখা জামাটি ঘেরের পাশে বেড়ায় ফেলে দেয়। পরে নিহত আমিনুরের মৃতদেহ তুলে কৃষ্ণা প্রামাণিকের বাগান ভিটার ঝোপঝাড়ের মধ্যে নিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ফরিদকে আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বটিয়াঘাটা থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় সম্পৃক্ত শাহিন, নয়ন এবং ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আলী মুনসুর মোড়লকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি অভিযানে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও এস এম আল-বেরুনীসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।