প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা

যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা

অপরাধ: রাজধানীর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল এলাকা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া দেড়-দু’বছরের একটি অনাথ শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। গত ২ মে মামলাটি দায়ের করেন হাজারীবাগের জনৈক এম রাকিব। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে (রিমান্ডে) রয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। অথচ ওই শিশুটিকে দত্তক নিয়ে বর্তমানে লালন-পালন করছেন জসিম উদ্দিন, যিনি মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের বাবুর্চি হিসেবে কাজ করছেন। আশ্রমে নেওয়ার পর শিশুটির নাম ফুহাদ রাখা হলেও বর্তমানে তার নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ আলী। শিশুটির বর্তমান বয়স প্রায় ছয় বছর।

সোমবার (৬ মে) সরেজমিন রাজধানীর কল্যাণপুরে মিল্টনের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ারে গিয়ে কথা হয় বাবুর্চি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আদালতের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি শিশু ফুহাদকে দত্তক নিয়েছেন। পরে শিশুটির নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মাদ আলী রাখেন তিনি। শিশুটির বর্তমান বয়স ছয় বছর।

জসিম উদ্দিন জানান, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি কিংবা বিজয় সরণিতে পড়ে থাকা আনুমানিক দেড়-দুবছরের অভিভাবকহীন অনাথ শিশুটিকে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ ফাউন্ডেশনে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাচ্চাটিকে সুস্থ করে তোলা হয় মিল্টন সমাদ্দারের এই প্রতিষ্ঠানে। তখন শিশুটির নাম রাখা হয় ফুহাদ। জসিম উদ্দিন আরও জানান, তার নিজের কোনও সন্তান না থাকায় প্রায় বছরখানেক পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি শিশু ফুহাদকে আদালতের মাধ্যমে দত্তক নেন। স্ত্রী সুমির সঙ্গে আলোচনা করে শিশু ফুহাদের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মোহাম্মদ আলী। বর্তমানে শিশুটি মিরপুরের একটি প্রাথমিক মক্তবে পড়াশোনা করছে।

বাবুর্চি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখানে কাজ শুরু করার কিছু দিনের মধ্যে শিশু ফুহাদকে মিল্টন দাদা নিয়ে আসেন। বাচ্চাটা প্রায়ই আমার কোলে থাকতো। আমি তাকে একটু একটু করে খাওয়াতাম। একটা সময় বাচ্চাটা আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকতে শুরু করে। আমার কাছ থেকে অন্য কারও কোলে যেতো না। এভাবে তার প্রতি আমার মায়া ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে। আমাদের মধ্যে এতটা মায়া তৈরি হয় যে শিশুটি আমাকে ছাড়া অন্য কারও কাছে থাকতে চাইতো না। বাচ্চাটি আমাকে ছাড়া কারও হাতে খেতেও চাইতো না। আমি বাইরে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করতো।’

তিনি বলেন, করোনার সময়ে ২০২০ সালের মার্চ থেকে মিল্টনের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ বাবুর্চি হিসেবে কাজ শুরু করেন জসিম। ২০১০ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সুমি। বিয়ের পর থেকে তাদের কোনও সন্তান হচ্ছিল না। এজন্য তারা (জসিম-সুমি) অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছেন। তাতেও তাদের কোনও সন্তান হয়নি।

জসিম আরও জানান, যেহেতু আমি নিঃসন্তান, আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে মিল্টন দাদার কাছে বাচ্চাটাকে দত্তক নিতে চাইলাম। প্রথমে দাদা রাজি ছিলেন না। বাচ্চাটি আমাকে ছাড়া কারও কাছ থেকে খায় না। এদিকে আমার কোনও সন্তানও নেই। এভাবে আমি ও আমার স্ত্রী কয়েক মাস ধরে বোঝানোর পর মিল্টন দাদা শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে আমার হাতে তুলে দেন।

বাবুর্চি জসিমের স্ত্রী সুমি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে বাচ্চা না হওয়ায় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করতাম। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সন্তান চাইতাম। নিজের গর্ভে না হলেও আল্লাহ আমাকে একটা সন্তান দিয়েছেন। সন্তান পেয়ে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। এখন আমার আর কোনও অভাব নাই। মোহাম্মদ আলী ওরফে ফুহাদই আমার সবকিছু।’

মিল্টনের বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলার বাদী এম রাকিব বলেন, ‘আমরা যখন শিশুটিকে পাই, তখন তার নাম আমরা জানতাম না। মিল্টনের ফাউন্ডেশনে নেওয়া পর তারা শিশুটির নাম রাখেন ফুয়াদ। শিশুটি দেখতে খুবই সুন্দর ছিল।’

মিল্টনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবপাচারের মামলার এজাহারে রাকিব উল্লেখ করেন—২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনের রাস্তায় দুই বছরের অজ্ঞাত এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তখন শেরেবাংলা নগর থানাকে বিষয়টি জানান। কিন্তু থানা-পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার ওই শিশুকে সেখান থেকে নিয়ে যান। তাকে অভিভাবক হিসেবে একটি সার্টিফিকেটও দেন মিল্টন সমাদ্দার। এ সময় বাচ্চাটির দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিল্টন সমাদ্দারকে বাদী ১০ হাজার টাকা দেন। পরবর্তী সময়ে পাঁচ-ছয় মাস যাবৎ সেখানে তিনি যেতেন এবং শিশুটির জন্য সামান্য কিছু খরচও দিয়েছেন। মিল্টন সমাদ্দার তাকে এটাও জানিয়েছেন, আদালতের মাধ্যমে চাইলে তিনি বাচ্চাটিকে গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর ২০২১ সালের কোনও একদিন মিল্টন ফোন করে হুমকি দিয়ে তাকে জানান, তিনি যেন ওই প্রতিষ্ঠানে আর না যান। শিশুটির যাতে খোঁজ-খবর না নেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি খবর দেখার পর গত ২৪ এপ্রিল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে যান তিনি। কিন্তু শিশুটিকে সেখানে তিনি দেখতে পাননি। তার অভিযোগ—২০২১ সালের কোনও একসময় শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুসলিম আইনে সন্তান দত্তক নেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ চাইলে ‘গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট-১৮৯০’ অনুসারে আদালতের মাধ্যমে শিশুর দায়-দায়িত্ব, অর্থাৎ অভিভাবকত্ব অর্জন করতে পারেন। আর অভিভাবকত্ব অর্জন করলে শিশুকে নিজের জিম্মায় রাখা যাবে। সে ক্ষেত্রেও বিষয়টি পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের পর্যায়ে পড়ে না।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।