জাতীয়: একটি রিপোর্ট। যেটি আলোড়ন তুলেছে দেশ-বিদেশে। চায়ের কাপ থেকে রাজনীতির ময়দান, আন্তর্জাতিক মিডিয়া। জনপ্রিয় রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না’ শিরোনামের রিপোর্টটি নিয়ে বিশ্লেষণ থামেনি এখনো। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের গদি টলটলায়মান হয়ে গিয়েছিল! প্রেসিডেন্ট কেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললেন। এই সময় এ ধরনের রিপোর্ট করারই বা কী প্রয়োজন ছিল- এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন অনেকেই। উত্তর মিলবে এ সপ্তাহের সংখ্যায়। বিস্তারিত পড়ুন ‘ইতিহাসের সত্য এবং রং-এর রাজনীতি’ জনতার চোখ-এ।……………
সত্য বড় কঠিন। যুক্তি আর ক্ষমতা দিয়ে সত্য আড়াল করা যায় না। আজ হোক, কাল হোক, সত্য বেরিয়ে আসবেই। ইতিহাস তাই বলে। একটা সত্য গোপন করতে গিয়ে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। তারপরও সত্যকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা যায় না। আবার কখনো এটা বিপদের কারণও হয়ে যায়। সরকার অনেককেই দায় মুক্তি দেয়। কিন্তু ইতিহাস কাউকে দায় মুক্তি দেয় না। মানবজমিনের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এর রিপোর্ট নিয়ে হইচই চলছে দেশ ছাপিয়ে বিদেশে। হয়তো আরও অনেক দিন চলবে। এই সময়ে অসুস্থ রং-এর রাজনীতিও দেখলো দেশের জনগণ। ৪৭৬ শব্দের একটি রিপোর্ট যে এত বড় ঝড় তুলতে পারে তা আমি কস্মিনকালেও ভাবিনি। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে লাখ লাখ রিপোর্ট লিখেছি। কোনো রিপোর্টই এত আলোড়ন সৃষ্টি করেনি। কেন এই প্রতিক্রিয়া? রিপোর্টে কী ছিল। যে রিপোর্টে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের গদি টলটলায়মান হয়ে গিয়েছিল! আপাতত বিতর্কের অবসান হয়েছে। রাজনীতিবিদদের বিচক্ষণতা একটি সাংবিধানিক সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। এই ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বিদায় নিলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় রচিত হতো। তবে বিতর্ক থেমে গেছে- এমনটা দেখছি না। অন্তর্বর্তী প্রশাসন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন- এমনটাই জানানো হয়েছে। প্রফেসর ড. ইউনূসের প্রশাসন যে এতটা ঠুনকো, এটার প্রমাণ মিললো শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে। প্রেসিডেন্ট কেন আমার সঙ্গে কথা বললেন। এই সময় এ ধরনের রিপোর্ট করার কী প্রয়োজন ছিল- এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন অনেকেই। টেলিভিশনের পর্দায় আমাকে এর জবাব দিতে হয়েছে। আমি বরাবরই পর্দার আড়ালে থাকতে চাই। নিজেকে জাহির করতে চাই না। টিভিতে উপস্থাপনা করতে এসেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন আড়াই মাস আগে। কার্যত এখন তিনি ইতিহাস। কিন্তু তার পদত্যাগ নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হয়ে গেছে। অনেকেই অংক মেলাতে শুরু করেছেন। বলছেন, তার পদত্যাগপত্র যেখানে নেই তাহলে তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। এমনকি আমার রিপোর্টেও তার বয়ান ছিল স্পষ্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ রেফারেন্সে বিষয়টির ফয়সালা হয়ে গেছে-এটাও বলছেন প্রেসিডেন্ট। তারপরও বিতর্ক থামেনি। তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। বঙ্গভবন ঘেরাও হয়েছে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাও দেখা গেছে। অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছেন। বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ফসল এককভাবে ঘরে তোলার জন্য একদল মরিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম শক্তি বিএনপি প্রেসিডেন্টকে বহাল রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে। বলেছে, সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের তরফে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে হয়তো এমন পরিস্থিতি হতো না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, প্রেসিডেন্টের পদ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক অনাকাঙ্ক্ষিত।
‘জনতার চোখ’ ইতিহাসের নির্ভেজাল সত্য খুঁজতে চেয়েছে। এটার একটা ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। শেখ হাসিনার পনের বছরের শাসনের ইতিহাস লিখতে গেলে এটার মূল্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। ইতিহাসবিদরা তা ভালো করেই জানেন। ‘জনতার চোখ’ কোনো ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সত্যটাই বের করতে চেয়েছে। এখানে একটা কথা বলা দরকার। প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন নিজে থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান নি। আমিই তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে সময় দিয়েছেন। অনেকক্ষণ কথা বলেছি। আমার জানার কৌতূহল ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে কী লিখেছেন তার পদত্যাগপত্রে। আমার অনুসন্ধানের বিষয়টি এটাই। এর বাইরে আমি কোনো কিছু চিন্তাও করিনি। এর মূল কারণ হচ্ছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী এক অডিও বার্তায় পদত্যাগ করেননি- এমন মন্তব্য করেছেন। তাই জনমনে কিছুটা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। সংবিধানের ৫৭ ধারা অনুযায়ী তার পদত্যাগ হয়নি- এমনটাও বলেছেন। ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে তখনই তিনি যদি কোনো সময় প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। অথবা সংসদ সদস্য না থাকেন। প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি পদত্যাগ করেননি- এটা সত্য। কারণ ঢাকায় পরিবেশ-পরিস্থিতি তখন ছিল অগ্নিগর্ভ। তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েও শেষ পর্যন্ত নিজেই বাতিল করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধানে বলা নেই- প্রধানমন্ত্রী যদি পালিয়ে যান তখন কী হবে। আইনবিদরাও বলছেন, তখন এটার মীমাংসা হয়ে গেছে আদালতে। প্রেসিডেন্টের বিশেষ রেফারেন্সের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
ওদিকে কবি, বিশ্লেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতিবেদন আমরা যেমন প্রশংসা করি, ঠিক তেমনি এই প্রশ্ন তিনি শুরুতে কেন আনেননি, তার জন্য তাঁর প্রতি প্রশ্ন জারি রাখতে চাই। পদত্যাগপত্র নাই, যদি আমরা তা বুঝতে পারি একজন দক্ষ অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়েও তিনি বুঝতে এত দেরি করলেন কেন? তিনি প্রশ্নটা তুলেছেন যখন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে। তাঁর প্রতিবেদনে চুপ্পুর পক্ষে সাফাই গাইবার সুর আছে। সেটা সাংবাদিক হিসেবে মতিউর রহমান চৌধুরীর বদান্যতা হতে পারে, অতএব আমরা তাঁর বিচক্ষণ সাংবাদিকসুলভ নিরপেক্ষতার প্রশংসা করি বটে। কিন্তু শুরুতে আমরা যখন প্রশ্ন তুলেছিলাম তখন তিনি পদত্যাগপত্রের জন্য অনুসন্ধান করলেন না, কিন্তু এখন কেন? এই প্রশ্ন আমাদের রইলো। এই প্রশ্ন থেকে যাবে। তিনি কি চুপ্পুকে সরাতে চান, নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খায়েশ অনুযায়ী সেনাসমর্থিত উপদেষ্টা সরকার আরও মজবুত করতে চান? আমরা আবার নতুন রূপে এক এগারো ঘটানো দেখবো কি? অতএব চুপ্পু এবং তার রক্ষাকর্তা জেনারেলদের প্রশ্নও সমান মাত্রায় রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। একে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
ফরহাদ ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই- কোনো বিতর্কে আমি জড়াতে চাই না। আগেই বলেছি, ইতিহাসের সত্য উদ্ঘাটন করতেই এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছি। আগে কেন করলাম না- এই প্রশ্নের জবাবও দেয়া দরকার। ফরহাদ ভাই নিশ্চয় জানেন, বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সময় আমি দেশে ছিলাম না। ৩রা আগস্ট রাতে আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।
সূত্র : জনতার চোখ, মানবজমিন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |