জাতীয়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন সমন্বয়করা। পাশাপাশি কয়েকটি ঘটনা সামনে এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্তি চেয়েছেন তারা।
পদত্যাগকৃত সমন্বয়করা হলেন- আব্দুর রশীদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার এবং সহ-সমন্বয়করা হলেন জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি ও সাইদুল ইসলাম। তাদের মধ্যে আব্দুর রশীদ জিতু কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলো হলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবির কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি দলের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের বিরুদ্ধে কাজ করা।
পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে একাধিক সমন্বয়কের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সমন্বয়করা। সেইসঙ্গে ৯ দফার অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিশ্চুপ থাকা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ তাদের।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও জুলাই বিপ্লবে আহত সব সংগ্রামী ভাইবোনের সুস্থতা কামনা এবং শহীদদের উৎসর্গকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সমন্বয়করা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুর রশীদ জিতু। তিনি বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবির সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাভার এলাকায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। ৫ আগস্ট আমরা সফলতা অর্জন করি। পুরো সময়টিতে আমরা সবাই একই লক্ষ্যে কাজ করেছি। পরবর্তীতে এক দফার ওপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, যে ৯ দফার ওপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছেন, সে ৯ দফার অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই ব্যানার আন্দোলনে সব পেশার, সর্বস্তরের এবং সব দলের মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়গুলোতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে।’
শামীম হত্যাকাণ্ডে একাধিক সমন্বয়কের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে জিতু বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবির কতিপয় সমন্বয়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজে একাধিক সমন্বয়কের নাম এলেও সে ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে পারেননি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।’
বক্তব্যের শেষের দিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে লালনের প্রচেষ্টা চালানোর কথা জানিয়ে আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, ৫ আগস্টের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বস্তরের, সব পেশার, ও সব মতের মানুষের। কোনও একজন বা দুজন, কিংবা কোনও একটি মত এই আন্দোলনের একক কৃতিত্বধারী নয়। সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের রক্ত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠীর নয় বরং সবার। গণমানুষের মেহনত, ঘাম ও রক্তের ফসল এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে এবং স্পিরিটকে লালন করতে যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিতু বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা সবসময় পাশে থাকবো। যেকোনও নৈতিক অধিকার আদায়ে আমাদের চেষ্টা সবসময় চলমান থাকবে।’
নতুন কোনও প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরেক সমন্বয়ক হাসিব জামান বলেন, ‘আমরা আপাতত নতুন কোনও প্ল্যাটফর্ম গঠন করছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে যেকোনও সময়ে আমরা নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করবো।’
গত ৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের ছাত্র আরিফ সোহেলকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র মাহফুজুল ইসলাম মেঘকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর কিছু দিন পর ১৩ জুলাই আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভার এলাকায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। সরকার পতনের পর ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন শাখার সমন্বয়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ। ফেসবুকে পোস্ট করে পদত্যাগের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত।’
এরপর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সমন্বয়ক লাবিব আহসান এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানোর দায়ে নাজমুল ইসলাম লিমনকে সহ-সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |