প্রচ্ছদ জাতীয় যেসব কারণে জাকসুতে শিবিরের বিশাল জয় এবং ছাত্রদলের ভরাডুবি

যেসব কারণে জাকসুতে শিবিরের বিশাল জয় এবং ছাত্রদলের ভরাডুবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তারা জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন। ইতিমধ্যে এই ফল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

পাশাপাশি নির্বাচনের শুরু থেকেই একধরনের দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনগুলো যখন ক্যাম্পাসে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে, তখনও ছাত্রদল প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজির অভিযোগ এবং বহিষ্কৃত ও হত্যা মামলার আসামিকে দিয়ে শাখা কমিটি গঠন নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছিল সমালোচনা। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং প্রচারণা কৌশল কী হবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ছাত্রদলের মধ্যে সঠিক সমন্বয় দেখা যায়নি। এমনকি তাদের কোনও নেতাকে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে পারেননি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নিজস্ব ভোটব্যাংক, সাংগঠনিক পরিচিতি ও দক্ষতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার অনুপস্থিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করার পর থেকে কর্মসূচিতে নারী নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ ভোটারদের মধ্যে তাদের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তিই ছিল জয়ের প্রধান নিয়ামক। বিশেষ করে ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক শক্তি তাদের জয়ের অন্যতম কারণ।

ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক শক্তি শিবিরকে এগিয়ে দেয়

শুরু থেকেই ছাত্রশিবির ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর মাঠপর্যায়ে শিবির কিছুটা দৃশ্যমান হলেও তাদের অধিকাংশ কর্মী-সমর্থক এখনও ক্যাম্পাসে আত্মপ্রকাশ করেনি। ফলে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। কমিটি ছিল সীমিত নেতাদের নিয়ে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সংগঠনের কর্মীরা আছেন, সেদিক থেকেও সাংগঠনিকভাবে তারা সহযোগিতা পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবিরের শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মকাণ্ড প্রচার হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। বিশেষ করে শিবির প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্লিন ইমেজ’ ধারণা তৈরি হয়।

নেতিবাচক ধারণা দূর করতে শিবিরের পদক্ষেপ

১৯৮৯ সালের ২৫ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির। ওই ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের নভেম্বরে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে ছাত্রশিবির। এরপর জাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল দেয় সংগঠনটি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কঠোর নীতি শিবিরের কার্যক্রমকে সীমিত করে দেয়। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে মিশে রাজনীতি ধরে রেখেছিল শিবিরের একটি পক্ষ। আবার ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে ক্লাস-পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি-নিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করেছে আরেকটি পক্ষ। এর আগে বিএনপির সময়েও শিবিরের একটি পক্ষের নেতাকর্মীরা সেই দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যার ফলে বর্তমানে তারা ক্যাম্পাসে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বলেই মনে করেন একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল

একাধিক শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয় কেবল কৌশল কিংবা কাকতালীয় নয়। এর পেছনে রয়েছে শিবিরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ। দলটির নেতাকর্মীরা দলীয় পরিচয় গোপন রেখে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন এবং আছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইন্স ক্লাব, বিএনসিসি, তরী, রোভার স্কাউটসহ অন্যান্য ক্লাব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছিল সংগঠনটি। এতে নিজস্ব ভোটব্যাংক গড়ে উঠেছে।

নিজেদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা, নারীদের নিরাপত্তা ও পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার শঙ্কার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয় সংগঠনটি। নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের এসব ধারণা ও শঙ্কার বিষয়গুলো দূর করতে কাজ করেন তারা। ক্যাম্পাসে আয়োজন করে হেলথ ক্যাম্প। ওই কর্মসূচিতে পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ নারী স্বেচ্ছাসেবী রাখা হয়। এ ছাড়া জাকসু নির্বাচনে সমন্বিত শিক্ষার্থী প্যানেলে ছয় নারী প্রার্থী রাখা হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও প্রার্থী করা হয়। এগুলো ভোটারদের মধ্যে তাদের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তিই ছিল জয়ের প্রধান নিয়ামক।

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আয়োজন

গত বছরের নভেম্বরে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরুর পর থেকে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পবিত্র কোরআন শরিফ বিতরণ, ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উপলক্ষে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন, শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, শিক্ষার্থী বৃত্তি, শীতের পোশাক বিতরণ, জুলাইয়ে আহত ব্যক্তিদের সম্মাননা, কোরবানির ঈদে শিক্ষার্থীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন ও অসুস্থদের সহায়তা প্রদানসহ নানা কার্যক্রম চালিয়েছে সংগঠনটি।

নতুন করে ক্যাম্পাসে আত্মপ্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ছাত্রশিবির দলীয় কোন্দল কিংবা কোনও ধরনের সংঘর্ষে জড়ায়নি। ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবির থাকলে ছাত্রদল সেখানে উপস্থিত থাকবে না, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও শিবির বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে জড়ায়নি। আত্মপ্রকাশের পরপরই বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে শিবিরবিরোধী মশালমিছিল হলে বিষয়টিকে ‘গণতান্ত্রিক চর্চা’ হিসেবে শিবিরের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে স্বাগত জানানো হয়। নির্বাচনি প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব বিষয় তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা ছিল ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের।

ছিল নিজস্ব ভোটব্যাংক

নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির দফতর ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট। মাজহারুল বিএনসিসির বিশ্ববিদ্যালয় প্লাটুনের সার্জেন্ট, ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও) ও ইনচার্জ ছিলেন। পাশাপাশি বিতর্ক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন (জেইউডিও) ও জাবি প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।

এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান পেয়েছেন ২ হাজার ৩৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের জিয়া উদ্দিন আয়ান পেয়েছেন ২ হাজার ১৪ ভোট। ফেরদৌস রোভার স্কাউটের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র রোভার মেট। এজিএস (নারী) আয়েশা সিদ্দিকা (মেঘলা) পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের মালিহা নামলাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৬ ভোট। মেঘলা জাবি প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের সদস্য। এ ছাড়া নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে প্রার্থীদের অধিকাংশ একাধিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের নিজস্ব ভোটব্যাংক ছিল।

ফল ‍বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণ সম্পাদক (জিএস), এজিএস (পুরুষ) ও এজিএস (নারী) পদের বাইরে শিবিরের প্যানেলে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে দেড় হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছেন ছয় জন, দুই হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছেন পাঁচ জন, আড়াই হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছেন চার জন ও তিন হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছেন দুজন। এদিক থেকে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের দেড় হাজারের ওপরে ভোটব্যাংক আছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছাত্রশিবিরের সমর্থকগোষ্ঠী তাদের পুরো প্যানেল ধরে ভোট দিয়েছেন, ফলে তাদের ফিক্সড ভোট অন্য কোনও প্যানেলের সদস্যরা পাননি।

অতীত এড়িয়ে বাস্তববাদী হিসাব-নিকাশ

এ ছাড়া শিবিরের অতীতের সমালোচনাকে এড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বর্তমানের দিকে নজর বেশি দিয়েছেন। কেউ কেউ বাস্তববাদী হিসাব-নিকাশও করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ভোট দেওয়ার সময় ভেবেছেন, তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের প্রার্থী কারা। তাদেরই ভোট দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রীদের হলে ছিল শিবিরের প্রভাব

নির্বাচনে শিবিরের একটি বড় সুবিধা এসেছে ছাত্রীদের হল থেকে। এজন্য বিভিন্ন হলে শিবিরের প্রার্থীরা বিপুল ভোট পান। ছাত্রীদের ভাষ্যমতে, সুশৃঙ্খল আচরণ ও ক্লিন ইমেজের কারণেই তাদের ভোট দিয়েছেন।

শিক্ষার্থী তারেক মাহমুদ বলেন, ‘আমার ধারণা, ক্যাম্পাসে শিবির এবং ছাত্রী সংস্থার আনুমানিক এক থেকে দেড় হাজারের মতো প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য জনশক্তি রয়েছেন। যাদের শতভাগ ভোট কাস্টিং নিশ্চিত করেছে শিবির। সঙ্গে তাবলিগ জামায়াতের মতো ডানপন্থি সংগঠনের ভোটও যুক্ত হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘শিবির সাংগঠনিকভাবে অনেক নিষ্ঠাবান। এ ছাড়া দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকায় বর্তমান শিক্ষার্থীরা শিবিরের সেরকম খারাপ কিছু দেখতে পায়নি। খারাপ কর্মকাণ্ড দেখতে পায়নি। হয়তো ভেবেছে ধর্মের নামে খারাপ কিছু নিশ্চয়ই করবে না শিবির।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের আসলে ওভাবে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়নি। তবে যেহেতু বিভিন্ন সময়ে আমরা সামনের সারিতে ছিলাম, শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছি; তাই আমরা ভোট পেয়েছি। আমরা প্রতিহিংসা বা নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত নই। এ কারণে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দলের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন।’

আছে ভিন্নমতও

তবে কোনও কোনও শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, অনেক যোগ্য প্রার্থী শুধুমাত্র প্যানেল-নির্ভর ভোটিংয়ের কারণে পরাজিত হয়েছেন। শিক্ষার্থী সবুজ শেখ বলেন, ‌‘আমি প্রার্থীর যোগ্যতা ও কাজ দেখে ভোট দিয়েছি। কিন্তু ফলাফলে দেখছি, অপরিচিত অনেকে শুধু প্যানেলের কারণে জিতে গেছেন। এতে দায়িত্ব পালনে তারা কতটা সক্ষম হবেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে আমার।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী শিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও করেন। শিক্ষার্থী সাদিয়া সরোয়ারের অভিযোগ, ‘জাহানারা ইমাম হলে শিবিরপন্থিদের নির্বাচনের দিন ছোট পোস্টার দেখা গেছে। অথচ এসব অনিয়ম নিয়ে কথা বলা হলেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি।’

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কোণঠাসা ছাত্রদল

নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে থেকেই শাখা ছাত্রদলের ভেতরে তীব্র কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ক্যাম্পাসে আসার পর ক্যাফেটেরিয়া এলাকায় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতাহাতি সেই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।

এর আগে শাখা কমিটি ঘোষণায় বহিষ্কৃত নেতাকে পদ দেওয়া, হত্যা মামলার আসামি ও শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্তদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অর্ধশতাধিক কর্মী শোডাউন করে প্রতিবাদ জানান। মূলত এ ঘটনার পর ভোটারদের কাছে ছাত্রদলের বিভক্তি ও দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তরুণ ভোটাররা এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। এতে স্পষ্ট হয়েছে—অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিতর্কিত কমিটি ও নেতিবাচক ইমেজ ছাত্রদলের পরাজয়ের মূল কারণ। আর ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক শক্তি, শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মকাণ্ড ও ক্লিন ইমেজ শিবিরকে অপ্রত্যাশিত সাফল্য এনে দেয়।

যা বলছেন ছাত্রদলের নেতারা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলাদলির কারণে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। প্যানেল দেরিতে ঘোষণা করায় প্রচারণার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির যে ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাবও পড়েছে ভোটে।

গত ৮ আগস্ট ছাত্রদলের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হুসাইন আল বাদল বলেন, ‘জাবি ছাত্রদলের কমিটির একাধিক অনৈতিক, দুর্নীতিগ্রস্ত ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড আমাদের সংগঠনের আদর্শ ও নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি, এই বিতর্কিত কমিটির বিলুপ্তি এবং একটি যোগ্য, কার্যকর ও স্বচ্ছ নতুন কমিটি গঠনের।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। তিনি বলেন, ‌‘শিবিরের প্রার্থীরা সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকায় তাদের ব্যক্তিগত কিছু ভোট আছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তারা শক্তিশালী নয়। তাদের ১৭ সদস্যের কমিটির সবাই একদিনও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মিছিল করতে পারেননি। ফলে তাদের সেভাবে শক্তিশালী কর্মকাণ্ড আছে বলে মনে করি না।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন