প্রচ্ছদ সারাদেশ যেভাবে আমেরিকায় ৪ কোটি টাকার স্কলারশিপ পেলেন সাদিয়া

যেভাবে আমেরিকায় ৪ কোটি টাকার স্কলারশিপ পেলেন সাদিয়া

বগুড়ার কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান পেয়েছেন। সাদিয়া বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে চান সাদিয়া। তিনি বগুড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (ভিএম স্কুল) থেকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি যুদ্ধে টিকতে না পারলেও আমেরিকায় নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ কোটি টাকার স্কলারশিপে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন।

সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী আমেরিকার বিখ্যাত লিবারেল আর্টস কলেজের টপ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশটির ১৪টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এসব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে-স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজ, বার্ড কলেজ, ওবারলিন কলেজ, ফ্র্যাঙ্কলিন এবং মার্শাল কলেজ, হোবার্ট এবং উইলিয়ামস স্মিথ কলেজ, ফারমান বিশ্ববিদ্যালয়, টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়, বেলয়েট কলেজ, সুইট ব্রেইর কলেজ, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইলিনয় ওয়েসলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিয়ন কলেজ ও ফ্লোরিডা সাউদার্ন কলেজ।

জানা যায়, পরবর্তীতে সাদিয়া তার পছন্দের ৪ কোটি টাকা সমমূল্যের স্কলারশিপ নিয়ে ফুলরাইড স্কলার হিসেবে ভর্তি হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে। সেখানেই তিনি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়াশোনা করবেন। সাদিয়ার বাবা কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এফএমএ সালাম ও মা একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। স্থায়ীয় বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট এলাকায়। বাবা মায়ের চাকরির সুবাদে কাহালুতে সাদিয়া বেড়ে উঠেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী আগস্টে পড়াশোনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন।

সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সবমিলিয়ে ১৮টি অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করেছিলাম, সেখান থেকে আমেরিকার ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডসহ পড়ার সুযোগ পেয়েছি।

সাদিয়া বলেন, সম্প্রতি আমেরিকার স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে ফুলরাইড হিসেবে ভর্তি হয়েছি। যেই স্কলারশিপটা আমি পেয়েছি তার পরিমাণ হলো প্রতিবছর প্রায় ৯০ হাজার ডলার। আমার থাকা খাওয়া, ব্যক্তিগত খরচ সবকিছু এই স্কলারশিপের মধ্যে কভার হবে। আগামী আগস্টে আমি আমেরিকায় চলে যাবো।

গবেষণার জন্য তার পছন্দ পাবলিক হেলথ। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম শেষে তিনি আমেরিকায় পিএইচডি করতে চান চিকিৎসা বিজ্ঞানে।

ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে স্ক্রিপস কলেজ সাদিয়াকে স্কলারশিপের অর্থ থাকা-খাওয়াসহ তার সব ব্যক্তিগত খরচ পূরণ হবে এই বৃত্তির মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপসহ স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজের গবেষণা কেন্দ্রে প্রথম সেমিস্টার থেকেই বিভিন্ন গবেষণা কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আমাদের লাসপা লিডারশিপ সেন্টারে বিশ্বের নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হয়।

সাদিয়ার কাছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে কী করা প্রয়োজন। এ সম্পর্কে সাদিয়া বলেন, নিজেকে সবদিক থেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে হবে এবং সহ-শিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে অংশ নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার সময় হচ্ছে অষ্টম-নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। কারণ, ভর্তিপ্রক্রিয়া মূলত কোনো নির্দিষ্ট একটি পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় না। এ ক্ষেত্রে একাডেমিক ফল তেমন মুখ্য নয়, পাশাপাশি ব্যক্তিগত মান, অর্জনসহ অনেক কিছুই নির্ভর করে। বৃত্তি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবার আগে একজন ভালো মানুষ ও প্রকৃত নেতা খোঁজে। তাই স্বপ্ন থাকলে শুরু থেকে নিজেকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার কাজ করে যেতে হবে।

সাদিয়া তার আজকের এই অর্জনের জন্য বাবা এফ এম এ সালাম এবং মা ফরিদা ইয়াছমিনের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবনী জানান, চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পিএইচডি করারও তার ইচ্ছে রয়েছে। শিক্ষা জীবন শেষে দেশে এসে উত্তরবঙ্গে আধুনিক সায়েন্স এন্ড কালচার সেন্টার গড়ার আকাঙ্খা রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করবেন।

আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার কামাল হোসেন জানান, সাদিয়া এক সঙ্গে ১৩ কলেজে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। সাদিয়া বগুড়ার গর্ব আমার কলেজের অহংকার। আজিজুল হক কলেজের অনেক কৃতি শিক্ষার্থী আছেন। কিন্তু সাদিয়ার কৃতিত্ব ভিন্ন মাত্রার। এর আগে কেউ এক সঙ্গে ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। সাদিয়া শুধু বগুড়া না এখন পুরো বাংলাদেশের গর্ব। সাদিয়ার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা জানাচ্ছি।

বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলায় সাদিয়ার শৈশব ও বেড়ে ওঠেছে। কাহালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ২০২২ সালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।