মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ভারতীয় মসলার ২০ শতাংশ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সালমোনেলা নামক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থাকার কারণে ২০ শতাংশ চালান এসময় যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩ মে পর্যন্ত ভারতের জনপ্রিয় মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মহাশিয়ান ডি হাট্টি (এমডিএইচ) প্রাইভেট লিমিটেডের এমডিএইচের ৬৫টি চালানের মধ্যে ১৩টি বা ২০ শতাংশ চালান ফিরিয়ে দেয়া হয়।
নিউজিল্যান্ডের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বুধবার (১৫ মে) জানিয়েছে, অন্যান্য দেশে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার পরে শীর্ষ ভারতীয় ব্র্যান্ড এমডিএইচ এবং এভারেস্টের মসলাজাতীয় পণ্যগুলোতে সম্ভাব্য দূষণের তদন্ত শুরুর পরে তারাও তদন্ত শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) তথ্যমতে, প্রতিটি চালানে কী পরিমাণ মসলায় দূষণ ছিল, সে ব্যাপারে এফডিএ নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি। তবে পাঁচমিশালি মসলা, চাটনি, মেথিসহ কয়েক ধরনের পণ্যের ১৩টি চালান যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে এফডিএ জানিয়েছে।
শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান এমডিএইচ-এর বেশ কিছু পণ্যে দূষণ ধরা পড়ার পর প্রতিষ্ঠানটি নজরদারির মধ্যে রয়েছে। জীবাণুর উপস্থিতি থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি করা ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মসলাজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে দেয়া হয়নি। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ক্যানসার সৃষ্টিকারী কিছু কীটনাশক উচ্চ মাত্রায় থাকার কারণে হংকং গত মাসে এমডিএইচ ও ভারতের আরেকটি শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী এভারেস্টের বেশ কিছু মসলা সেখানে বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, ইথিনাল অক্সাইড মানবদেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং এটি দীর্ঘদিন খাবারের সঙ্গে শরীরে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তবে ভারতীয় এই দুটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তাদের প্রক্রিয়াজাত মসলা নিরাপদ এবং এতে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এমডিএইচ দাবি করে, মসলা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করার কোনো পর্যায়ে তাদের মসলায় ইথিনাল অক্সাইড ব্যবহার করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও হংকংয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি মসলা ভারত ও বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম মসলা প্রস্তুতকারক দেশ এবং সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এইসব প্রতিষ্ঠানের মসলার বিরাট চাহিদা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারত মসলার বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। জিওন মার্কেট রিসার্চের এক হিসাবে, ২০২২ সালে কেবল ভারতেই ১ হাজার ৪৪ কোটি ডলারের মসলার বাজার ছিল। ভারতের স্পাইস বোর্ড জানিয়েছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভারত ৪০০ কোটি ডলারের মসলা রপ্তানি করেছে। ভারতের ১০০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান এমডিএইচের পণ্যের ওপর সর্বশেষ নজরদারির আগেও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ, তখন তাদের মসলায় সালমোনেলা নামক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রোগের জন্য দায়ী।
মার্কিন সংস্থা এফডিএর তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২২–২৩ অর্থবছরের এমডিএইচের ১১৯টি চালানের মধ্যে ১৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এগুলোর বেশির ভাগেই সালমোনেলা জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরের ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ চালান সে দেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। চলমান ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এভারেস্টের ৪৫০টি চালানের মধ্যে সালমোনেলা জীবাণুর উপস্থিতির কারণে কেবল একটি চালান বাতিল করা হয়েছে। তথ্য বলছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রতিষ্ঠানটির ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ চালান বাতিল করা হয়। তবে এর আগের অর্থবছরে তাদের কোনো চালান বাতিল করা হয়নি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |