ভারতের মিডিয়ার চাপে পড়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এক নারীর বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মিডিয়ার চাপে পড়ে নিজের বক্তব্য স্বীকার করলেও মিথ্যা বক্তব্য দেয়ায় অনুতপ্ত ওই নারী এখন দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
ভারতে বসবাসরত আপন ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে অংশ নিতে ভারতে যান নড়াইলের খুকুরানী বিশ্বাস। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দোগাছিয়া হয়ে মায়াপুরের উদ্দেশ্যে ২ ডিসেম্বর নড়াইল ছাড়েন। ওই দিনই সীমান্ত পেরিয়ে পেট্রোপোল সীমান্তে পৌঁছান। সীমান্তের সেখানে তখন ইসকনের ডাকা বিক্ষোভ চলছিল। ওই সময়ে ভারতের কয়েকটি মিডিয়ার চাপে তিনি বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং ভারতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
খুকুরানী ওই বক্তব্যে বলেন, ‘এলাকার হিন্দুরা বেশিরভাগই ভয়ে পালিয়েছে। অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে অন্যরা পালিয়ে আছে। এখানে তারা হুমকি দিচ্ছে যে, মুসলিম রাষ্ট্র তৈরি করবে তাই হিন্দুরা যেন দেশ ছেড়ে চলে যায়।’
তিনি ওই বক্তব্যে ভারতের কাছে হিন্দুদের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সাড়ে ৬ মিনিটের বক্তব্যে খুকুরানী নড়াইলের হিন্দুদের এলাকায় থাকা এবং পূজা অর্চনায় বাধা দেয়া হচ্ছে বলে মিডিয়ার সামনে বলেন।
খুকুরানীর ওই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিচলিত হয়ে পড়ে পরিবারসহ পুরো এলাকা। পরিবারের লোকেরা খুকুরানীর এই বক্তব্যে হতাশ হয়ে পড়েন।
৫ ও ৬ ডিসেম্বর খুকুরানী বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামে যায় দেশের অনেকগুলো মিডিয়া কর্মী। সাংবাদিক উপস্থিতি টের পেয়ে খুকুরানী বিশ্বাসের স্বামী অরবিন্দ বিশ্বাস, ছেলে অমলেন্দু বিশ্বাসসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন।
খুকুরানী বিশ্বাসের স্বামী অরবিন্দ বিশ্বাসের বলেন, ‘আমার বয়স এখন প্রায় ৬৫ বছর। এই পর্যন্ত এলাকায় কোনো চাপ অনুভব করিনি বরং আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেমিশে থাকি। আমাদের সব বিপদ-আপদ তারাই দেখে-শুনে রাখে।’
খুকুরানী বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, এখানে হিন্দুদের উপর কোনো জুলুম বা এ ধরনের কোনো ঘটনা কখনোই ঘটেনি। মা যে কেন এসব কথা বললো তা আমাদের বোধগম্য নয়। মায়ের কাছে পরে শুনেছি তিনি ওখানকার মিডিয়ার চাপে পড়ে এসব কথা বলেছেন। মার হয়ে আমি এলাকা তথা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
মায়ের বক্তব্যের পর স্থানীয় কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটু তো অস্বস্তিতে আছি এখন কিন্তু স্থানীয় মুসলিম প্রতিবেশী এবং মেম্বর আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন, ক্যাম্প থেকে পুলিশ ও এসে খোঁজ নিয়ে গেছে।
এ সময় মা খুকুরানীর বক্তব্য নেবার জন্য ছেলে অমলেন্দু মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। এসময় খুকুরানীকে তার বক্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘আমি বর্ডার পার হলে কয়েক সাংবাদিক আমাকে মোটরসাইকেলে করে পাশে নিয়ে যান। সেখানে তারা কয়েকজন আমাকে বলে, আপনার গলায় মালা দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি ইসকন সদস্য। আপনি এভাবে বলেন, ভালো হবে। এরপর আমি তাদের চাপে ওসব কথা বলতে বাধ্য হই।’
খুকুরানী বিশ্বাসের প্রতিবেশী হবখালী কলেজের প্রভাষক সিকদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সমস্যায় কোনোদিন পড়েননি। আমাদের এলাকা কেন মাইজপাড়া ইউনিয়নে হিন্দুরা কোনো চাপে নেই।
মাইজপাড়া ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের কোথায় কি হচ্ছে তা জানা নেই তবে আমাদের এলাকায় ৫ আগস্টের পরেও কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা শত বছর ধরে এই এলাকায় একসঙ্গে আছি। এলাকার যেকোনো সমস্যায় আমরা মিলেমিশে থাকি।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্যফ্রন্ট নড়াইল জেলা সভাপতি কল্যাণ মুখার্জী বলেন, ‘নড়াইলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই মহিলার কথাগুলো অতিরঞ্জিত হয়েছে। তবে মনে হয় সে কোনো চাপে বলেছে। তবুও এ ধরনের কথা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট করে। আমরা সম্প্রীতির বন্ধনটা রাখতে চাই।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |