প্রচ্ছদ হেড লাইন হিন্দু নারীকে হত্যাচেষ্টার দাবি, যা বলছে রিউমার স্ক্যানার

হিন্দু নারীকে হত্যাচেষ্টার দাবি, যা বলছে রিউমার স্ক্যানার

হেড লাইন: সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইজন পুরুষ কর্তৃক তিনজন নারীকে মারধরের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, উগ্র মুসলিম পুরুষ কর্তৃক প্রকাশ্যে হিন্দু নারী হত্যাচেষ্টার ভিডিও এটি। তবে ভিডিওটি ২০২২ সালের পুরোনো বলে উথে এসেছে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমার স্ক্যানার। যেখানে বলা হয়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় বরং, এটি ২০২২ সালে জাম পাড়া এবং জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সংঘটিত একটি মারধরের ঘটনার সময়ের ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটিতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর লোগো দেখা যাওয়ার সূত্রে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৩ জুন ‘জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাছ থেকে জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে। ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ০৩ জুন ‘চট্টগ্রামে জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে তিন নারীকে মারধর, ভিডিও ভাইরাল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে বছরের ২ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জোড়বটতল এলাকায় জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে তিন নারীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আহত তিনজন হলেন যোগেন্দ্র চন্দ্র দাসের স্ত্রী শ্রীমতি রানী দাস (৩০), মিলন চন্দ্র দাসের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দাস (৩২) ও কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের স্ত্রী রীমা রানী দাস (২৭)। হামলাকারীরা হলেন তৌহিদুল ইসলাম ও আলমগীর। এ ঘটনায় সেসময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। 

ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর সে বছরের ০৫ জুন জনি চৌধুরী নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে আলোচিত এই দাস বাড়ির এক সদস্য তপন দাসের বরাতে জানানো হয়, ‘তারা চার ভাই জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘদিন ওমানে প্রবাস জীবন অতিবাহিত করছেন। আপনাদের জানার সুবিধার্থে উনার ইনবক্সের বক্তব্যটা তুলে ধরলাম—

“ওরা আমাদের এলাকায় জায়গা খরিদ করছে মনে হয় ৫ শতক। কিন্তু জাল কবলা বানিয়ে জায়গা দখল করে আছে ৫০ শতকের মত। এমনকি উনি যে জায়গায় বাড়ি করছে ওটাও হিন্দুদের দখল করা জায়গা। অধিকাংশ জায়গা নিয়ে কোর্ট এ মামলা চলমান। যে জায়গায়  আমাদের মেরেছে ওটা আমার বাবার  নামে ক্রয়কৃত। যদিও ওটা নিয়ে মামলা আছে কোর্ট এ। মামলা চলতেছে আরেক প্রতিবেশির সাথে। কিন্তু ওরা চায় দখল করে নিতে।  যদিও তাদের কোন কাগজ দলিল কিছুই নাই। কবলা এবং নামজারি সব আমাদের নামে। আমরা কিছু বলতে গেলেই দেশ থেকে বিতাড়িত করার হুমকি, আর অত্যাচার করে। এভাবে অনেকবার হামলা করেছে।”

এছাড়াও, সে বছরের ০৪ জুন সুমন দাস নামের অপর একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত ঘটনার বিষয়ে প্রচারিত পোস্টে বলা হয়, “কেবল জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে গতকালের এই বর্বরোচিত, রক্তক্ষয়ী হামলা হয়নি। প্রতিবেশী আমানুল হক এবং তার দুই পুত্র আলমগীর (বড় ছেলে), তৌহিদ (ছোট ছেলে) পেশিশক্তি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এই পরিবারটিকে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সর্বশেষ গতকাল ভূমিদস্যু আলমগীর ও তৌহিদুল শ্লীলতাহানি করে খুব ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করে রক্তাক্ত করেছে এই অসহায় ৩/৪ নারীকে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।” পাশাপাশি খবর বাংলা নামে একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে সে বছর উক্ত ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী কর্তৃক সীতাকুণ্ড মডেল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের কপি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই বিষয়ে ভুক্তভোগী সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগের পাশাপাশি পূর্বে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেন (মামলা নং-১৩২৭/২০২১)। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদী হাজি আমিনুল হক সওদাগর, পিতা মৃত ফজলুর রহমান। বিবাদীরা হলেন সচী রানী দাস,স্বামী অমৃত দাশ, শ্রীমতি দাশ, স্বামী যোগন্দ দাস, অঞ্জনা দাস স্বামী চন্দ্র দাস, রিনা দাস,স্বামী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস।

অভিযোগে বলা হয়, “উপরোক্ত বিবাদীগণের সাথে আমার বহুদিন যাবৎ জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিবাদীগণ আমার খরিদা সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করিবার চেষ্টা করিতেছে। এতে আমি বিবাদীগণদের বাঁধা দিলে বিবাদীরা আমার ও আমার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অযথা নির্যাতন করিতে শুরু করে। ছোটখাটো বিষয়কে কেন্দ্র তারা গালিগালাজ এবং মারধর করে। স্থানীয় গণ্যমান্য এবং মেম্বারকে অবহিত করলে উনারা বিবাদী গণের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে এবং সম্পূর্ণ জায়গা বহুবার সুষ্ঠুভাবে পরিমাপ করে। কিন্ত বিবাদীগণ কোন কিছুই মানতে রাজি না এবং আমার পরিবারকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। জায়গা ছেড়ে না দিলে মেরে ফেলবে বলে হুংকার দেন। তাই আমি বিবাদীর বিরুদ্ধে বিগত ৯/৩/২০১৭ এবং এতে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে ২৪/৯/২০১৮ সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করি। এতেও বিবাদীগণ ক্ষান্ত হননি তাই নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করি। চট্টগ্রাম কোর্ট হইতে একটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া ফর্মে উক্ত জায়গায় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কাজ করা যাইবেনা। কিন্ত বিবাদীগণ তারপরও আমার জমি ভোগ দখল করিবার পায়তারা করিতেছে। তাই আমি ২১/৪/২০২২ নিষেধাজ্ঞা অবমাননা মূলে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। বিবাদী গত উক্ত বিষয় জানতে পেরে অদ্য ২/৬/২০২২ তারিখ সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় আমার জাম গাছ থেকে জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে আমার ২ ছেলের উপর লোহার রড দিয়ে হামলা করে তাদের রক্ত ঝড়ায় এবং তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করে। উক্ত ঘটনায় আমার বড় ছেলের মাথা ফেটে রক্ত বের হয় এবং ছোট ছেলের ডান হাতে গুরুত্বর জখম হয়।”

অর্থাৎ, উপরিউক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, জাম পাড়া এবং জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকে সৃষ্ট মারধরের ঘটনা এটি; যা ২০২২ সালে বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং, ২০২২ সালের পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম পুরুষ কর্তৃক হিন্দু নারীর ওপর হামলার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

সূত্র : Channel 24

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।