
মৌলভীবাজারের “ফগা” শব্দের ইতিহাস। অনেকে বলেন থাকেন দই ফার্সেল করতে গিয়েছিলেন কোন একজন লোক এরপর থেকে নাকি ফগা ডাকা হয় তবে এর সাথে অনেকেই ভিন্নমত এমনকি এর কোন দলিল পাওয়া যায়নি। আসুন জেনে নেই কেনো মৌলভীবাজার বাসীকে ফগা উপাধি দেওয়া হয়েছে এর কারণ।
সিলেট টু আয়ারল্যান্ড ওয়েব ডেস্ক রিপোর্ট; ১৯১৯ সালে ভারত উপমহাদেশের আসাম প্রদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচনে “চিরতন মুচি”কে বিজয়ী করার কারণে অন্যান্য জেলার কতিপয় লোক মৌলভীবাজার জেলাবাসীকে একটি অপবাদ দিয়ে থাকে। আর তা হচ্ছে “ফগা”। আসলেই কি মৌলভীবাজারবাসী বোকা ছিল? না ছিল প্রতিবাদী। তবে কেন মৌলভীবাজার বাসীকে “ফগা” বলা হয়। তা বিভিন্ন সময়ে গুণীজনরা তাদের লিখনিতে উল্ল্যেখ করেছেন। আসলে মৌলভীবাজারবাসী কি তৎকালিন সময়ে ভুল করেছিল? না বিট্রিশদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিল? মৌলভীবাজারবাসী সব সময়েই অন্যায়ের বিপক্ষে লড়েছেন, যার প্রমাণ বিট্রিশদের পা চাটা তথাকথিতদের গোলামদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছিল।
অনেকেই না জেনে মৌলভীবাজারবাসীকে “ফগা” বলে একটি অপবাদ দেয়। আসলে মৌলভীবাজারবাসীরাই আসাম প্রদেশের মধ্যে ন্যায়ের প্রতিক ছিল বলে প্রতিয়মান হয়। এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইদানিং ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম এই অপবাদটিকে ব্রিটিশ বিদ্রোহে মৌলভীবাজারবাসীর অবদান সম্পর্কে জানাতে পারবে। তার জন্য মৌলভীবাজারের এক কৃতি সন্তানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হবে। আর তিনি হচ্ছেন, নিজামূল ইসলাম। তার মাধ্যমে অনেকেই জানতে পেরেছে কেন চিরতন মুচিকে মৌলভীবাজারবাসী ভোট দিয়েছিল। নিজামূল ইসলামের তথ্যবহুল ঐতিহাসিক তথ্যগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
১৯১৯ সালে যখন সমগ্র ভারত জুড়ে বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে চরম পর্যায়ে, তখন এই আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর জন্য চতুর https://www.facebook.com/share/v/12MdWEDTXqk/ ইংরেজরা ১৯১৯ সালে একটি আইন করে ” আসাম প্রদেশিক আইন সভার সদস্য ” নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়। তখন বৃটিশদের সমর্থন দিয়ে এক গোষ্ঠী ” ন্যাশ- নাল লিবারাল ফ্রন্ট ” গঠন করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দেয়। তখন ঐ ফ্রন্টের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার তৎকালিন চেয়ারম্যান ইরেশ লাল সোম প্রার্থী হন। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে বিদ্রোপ ও হাস্যকর করার লক্ষে নিম্ন শ্রেনীর মুচি, ধোপা, নাপিত, মাইমাল, মাঝি ইত্যাদি মূর্খ লোক দিয়ে নির্বাচন করার সিন্ধান্ত হয়।
সেই অনুযায়ী তখনকার মৌলভীবাজারের শিক্ষিত ও ভদ্র সমাজ নিরক্ষর ও নিম্ন শ্রেনীর চিরতন মুচিকে নির্বাচনের প্রার্থী করেন। ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসের এই নির্বাচনে চিরতন মুচি ” আসাম প্রদেশিক আইন সভার সদস্য ” নির্বাচিত হয়। অথচ সে একজন মূর্খ।
তখন মৌলভীবাজার বাসী দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে, বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে ” আসাম প্রদেশিক আইন সভার সদস্য ” করে একজন মূর্খকে। সমস্ত পৃথিবীকে দেখিয়ে দেয়, এটা একটি হাস্যকর নির্বাচন। আর এটি ছিল মৌলভীবাজার বাসীর সচেনতা।
এভাবে সুনামগঞ্জ থেকে কালিচরণ মুচি, নোয়াখালী থেকে একজন মুচি ও একজন নাপিত, কুমিল্লা অঞ্চল থেকে রাস্তার খাবারের দোকানদার মোকরম আলী ভাটিয়াল নির্বাচিত হয়ে, আসাম আইন সভাকে পৃথিবীর শিক্ষিত জাতীর কাছে হাস্যকরে করে তুলে।
আর এই কারণে কি মৌলভীবাজার বাসী ” ফগা ” ?
না দেশ প্রেমিক ? এটা যাচাইয়ের ভার আপনাদের।
তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের ইতিহাস (আধুনিক যুগ)
লেখকঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার