প্রচ্ছদ জাতীয় মো. নজরুল ইসলাম এখন আসিফ নজরুল—সংশোধিত হলো উপদেষ্টার নাম

মো. নজরুল ইসলাম এখন আসিফ নজরুল—সংশোধিত হলো উপদেষ্টার নাম

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের নাম এখন থেকে প্রশাসনিকভাবে ‘আসিফ নজরুল’ লেখা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকতা চাকরি থেকে ডেপুটেশনে থাকা এই অধ্যাপকের সকল একাডেমিক, এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন সনদ এবং পাসপোর্টে ‘মো. নজরুল ইসলাম’ নাম সংশোধন করেছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সংশোধনের সব কপি জমা দিলে গত মাসে অনুষ্ঠিত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এই সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম সংশোধিত করে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে মো. নজরুল ইসলাম ব্যবহার করতেন আসিফ নজরুল। তবে ব্র্যাকেটে তিনি আসিফ নজরুল লিখতেন। তাছাড়া, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমনকি উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরও সেখানে আসিফ নজরুল নামেই লিখতেন তিনি।

জানা গেছে, এতদিন তার একাডেমিক সনদ, এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন সনদ এবং পাসপোর্টে ‘মো. নজরুল ইসলাম’ নাম ছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কাজে মো. নজরুল ইসলাম লেখা হত। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এইচএসসি ও এসএসসির সনদের নাম সংশোধিত করে মো. নজরুল ইসলাম থেকে আসিফ নজরুল করার আবেদন করলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে এই নামের সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল।

এরপর তিনি সংশোধিত নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহারের বিষয় বিবেচনা করতে সিন্ডিকেটের সভায় আবেদন করেছিলেন। অবশ্যই এর আগে তার অনার্স ও মাস্টর্স, এনআইডি, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন সনদে তার নাম সংশোধন করেছেন।

জানা গেছে, গত মাসের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় এজেন্ডাভুক্ত ছিল তার সংশোধিত নামের বিষয়টি। এজেন্ডায় বলা ছিল, আসিফ নজরুল সকল একাডেমিক সনদ (এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টর্স), এনআইডি, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন সনদে তার নাম ড. মো. নজরুল ইসলাম সংশোধন করে ড. আসিফ নজরুল সংশোধন করেছেন এবং ব্যক্তিগত নথিতে সংরক্ষণের জন্য সত্যায়িত কপি জমা দিয়েছেন। পরে তা সিন্ডিকেট অনুমোদন দেয়।

এদিকে, গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানাচ্ছি যে, আপনার নাম সংশোধন করে আসিফ নজরুল করায় সংশোধিত নাম (আসিফ নজরুল) প্রশাসনিক কাজের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।’

নজরুল ইসলাম থেকে আসিফ নজরুল হয়ে ওঠার গল্প
২০২১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে নজরুল ইসলাম থেকে আসিফ নজরুল হয়ে ওঠার গল্প শেয়ার করেছিলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তিনি সাপ্তাহিক বিচিন্তায় সাংবাদিকতায় যোগ দেন। পরে তিনি কয়েক মাস সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত কলামিস্ট তার বহুল পরিচিতি ছিল।

ওই সাক্ষাৎকারে আসিফ নজরুল হয়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সাপ্তাহিক বিচিন্তায় যখন আমি লেখালেখি করতাম তখন আমার কয়েকটি লেখা দেখে পত্রিকাটির সম্পাদক মিনার মাহমুদ ভাই খুবই রেগে গেলেন। আমাকে ডেকে তিনি বললেন, এটা কোনো নাম হলো—মো. নজরুল ইসলাম। আপনি রাস্তায় গিয়ে ১০টি ইট মারলে তিনটা অন্তত নজরুল ইসলামের গায়ে পড়বে। এত নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে। আপনি এত কষ্ট করে পত্রিকায় লিখছেন লোকজন ভাববে অন্য নজরুল ইসলাম। তখন সাংবাদিকতায় অনেক নজরুল ইসলাম ছিলেন।

‘তখন তিনি আমাকে আল্টিমেটাম দিয়ে বললেন, আগামী দুই-তিন ঘণ্টা সময় দিলাম। এর মধ্যে নাম চেঞ্জ করতে হবে। পরে তো পড়লাম মহাবিপদে। তখন কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে বসে নাম খুঁজতে লাগলাম। আয়াতুল্লাহ নজরুল নাম দিলেন আমার এক সিনিয়র কলিগ। তখন এ নামে কেউ ছিলেন না। আরেকজন বললেন আসিফ নজরুল। না আগে আশিক নজরুল বলেছিলেন। আশিক নাম তো তরুণ বয়সে কী মিন করে বুঝতে পারছেন। তখন আসিফ নজরুল নামটা সিলেক্ট করে মিনার মাহমুদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম নামটি। এরপর কিছুদিন পর বিচিন্তায় কাভার স্টোরিতে আসিফ নজরুল নামে আমার নিউজ ছাপা হলো।’
সূত্র: The Daily Campus