প্রচ্ছদ জাতীয় মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে যেসব কথা বলেছিলেন হাদি

মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে যেসব কথা বলেছিলেন হাদি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। জানাজা শেষে লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে ওসমান হাদির মরদেহ ঢাবিতে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশের তরুণদের মেধা ও শ্রমকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মধ্যদিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের স্বপ্ন দেখেছিলেন ওসমান হাদি।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে এক বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কী করতে চান, কী নিয়ে স্বপ্ন দেখন সে সব নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচিত হলে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওসমান হাদি।

তিনি বলেছিলেন, একটা কথা বলে রাখি ঢাকা-৮-এর কোনো প্রান্তে চাঁদাবাজি হবে না এটা আমি বলে রাখছি। সিন্ডিকেটটা তো অনেক বড়, সব আমি বন্ধ করতে পারব কিনা জানি না। তবে কিছু কাজ করব।

চাঁদাবাজি প্রতিরোধে প্রথম কাজের কথা বলতে গিয়ে আপসহীন হাদি বলেছিলেন, নাম্বার ওয়ান ঢাকা-৮-এর একটা সবজিওয়ালা-ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে যদি কেউ চাঁদা তোলে, আমি ওসমান হাদি সেটা শুনলে আমার টিম নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। তার কাছ থেকে চাঁদা তুললে আমার গায়ে হাত দিয়ে তারপর চাঁদা তুলতে হবে। আর যদি অনেক রাঘব বোয়াল হয়, যিনি নিজে যান না, তার লোক পাঠান, তাহলে তার নামটা তো জানব।

হাদি চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেটের তথ্য পাবলিক করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যেই রাঘব বোয়ালরা তাদের ছানাপোনা পাঠিয়ে চাঁদাবাজি করাবেন, ঢাকা আটের মধ্যে, আমি সংসদে দাঁড়াইয়া বিসমিল্লাহ বইলা প্রত্যেকের নাম প্রকাশ করে দেবো। এরপরে যা আছে কপালে আমার হবে এইটা আমি করবই।

তিন নম্বরে তিনি ঢাকা-৮ কেন্দ্রিক বিভিন্ন হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা চিকিৎসা সিন্ডিকেটও ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, পুরো বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার হাব হলো শাহবাগ। শুধু ঢাকা-৮ না, পিজি, বারডেম, ঢাকা মেডিকেলে এমনভাবে সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে, চিকিৎসাতো চিকিৎসা আপনি মরে গেলেও আপনার লাশটা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট করা হবে। আপনার কাছে চাওয়া হবে ২০ হাজার টাকা ওই টাকার কমে যদি কেউ ১৫ হাজারে যেতে চায়, আপনার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় না।

তিনি বলেছিলেন, আপনি চিন্তা করেন কেমন দেশে আমরা আছি। আমি ইনকলাব মঞ্চের ভাই এবং ঢাকা-৮-এর তরুণ বন্ধুদের নিয়ে ভলান্টিয়ারি টিম করব। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষকে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দেবেন তারা। এর ফলে কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসা এই হসপিটাল জোনে চলবে না। অনেক অসুস্থ মানুষ আসেন কোনো ডিপার্টমেন্টে যাবেন তার বোঝেন না। তারে সাপোর্ট করবার মতো কেউ পুরো কান্ট্রিতে নাই। আমরা বুথ স্থাপন করব এবং তাকে একদম ওই হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়াসহ চিকিৎসা প্রতিটি ধাপে আমাদের ভলান্টিয়াররা সহায়তা করবে।

হাদি বলেছিলেন, আপনাদের অনেক বড় বড় স্বপ্নের কথা শোনাতে পারি। কিন্তু আমি ওসমান হাদি আবারও বলি, আমি যেটা বলি ইনশল্লাহ আমি ওইটা করার জন্য বলি বা যেটা বলি ওইটা করি। আমি এখন পর্যন্ত আমার ক্যাপাসিটিতে যেটা করতে পারব এটুকুন বললাম। বাকি ইনশল্লাহ আরও অনেক কিছু করব।

তিনি বলেছিলেন, আমি আপনাকে শুধু এইটুকু বলি, যদি আল্লাহ আমাকে এমপি বানায়, বাকি ২৯৯ জন এমপি তার ভোটারদের কাছে ইনশআল্লাহ পরবর্তী নির্বাচনে চাপের মুখে পড়বেন। তারা শুনতে বাধ্য হবেন, যে এই ছেলেটা এইটা এইটা পারলে আপনারা কেন পারলেন না?