প্রচ্ছদ জাতীয় মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে দেখতে চেয়ে স্বামীর হাতে লাশ হলো স্ত্রী!

মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে দেখতে চেয়ে স্বামীর হাতে লাশ হলো স্ত্রী!

মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে দেখতে বাপের বাড়ি যেতে চাওয়ায় এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে লাশ হতে হলো বিথি বেগম (৩৫) নামে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূকে।

শেষ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে এলেও জীবিত নয় অ্যাম্বুল্যান্সের খাটিয়ায় লাশ হয়ে ফিরতে হলো বিথিকে। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে বিথীকে হত্যা করেছে বলে গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই স্বামী সাখাওয়াত হোসেন পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ওই গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বাবার বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

গৃহবধূর বাবার বাড়ি সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে একই উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের তামারহাজি গ্রামের নজির সেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিথি বেগমের বিয়ে হয়। বিথির বৃদ্ধ বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুপথযাত্রী। এ খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে বাবাকে দেখতে বাপের বাড়ি আসতে চেয়েছিল সে।

সম্পত্তি ও যৌতুকলোভী স্বামী সাখাওয়াত হোসেন এতে বাধা দেয়। এ নিয়ে বিথি বেগম জেদ ধরলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাষণ্ড স্বামী।

এ সময় অচেতন হয়ে পড়েন বিথি বেগম । তাকে মৃত ভেবে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ঘরে থাকা কীটনাশক স্ত্রীর মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়।

পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিথি বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

গৃহবধূর চাচাতো ভাই সজল সেখ জানান, চাকরির সুবাদে আমি ফরিদপুর থাকি। ছোট ভাই ফোন করে জানায়, বিথিকে ফরিদপুর মেডিক্যালে নেওয়া হচ্ছে।

খবর পেয়ে আমি মেডিক্যালে ছুটে গিয়ে বিথির চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিছু সময়ের মধ্যে আমার বোনজামাইসহ (বিথির স্বামী) অন্যান্য আত্মীয়রা পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং বিষক্রিয়ায় শনিবার রাতে আমার বোনের মৃত্যু হয়। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।

নিহত গৃহবধূর মা দোলেনা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

বিথির বোন নাজমা বেগম জানান, ৯ ভাই-বোনের মধ্যে বিথি ছিল ছোট। আমার একমাত্র ভাই প্রতিবন্ধী। বিথিকে তার স্বামী সাখাওয়াত প্রায় নির্যাতন করত। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ফোনে কান্নাকাটি করত। এর আগেও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমার বোন বিষপান করতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। হাসপাতালে ফেলে রেখে স্বামীর পরিবার পালিয়েছে এটাই তার প্রমাণ।

হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্টকারী ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা জানান, মরদেহের সুরতহাল শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে। তবে শরীরের জামা-কাপড় রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল।

আজ রবিবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।