প্রচ্ছদ হেড লাইন ‘মাফিয়া’ ইশারায় চিনি-এলাচের দাম চড়া!

‘মাফিয়া’ ইশারায় চিনি-এলাচের দাম চড়া!

হেড লাইন: দেশের অন্যতম বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। চট্টগ্রামের আশপাশের জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবতীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ হয় এই বাজার থেকেই। এবার রমজানের আগেই বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে এই বাজারে চলছে অস্থিরতা। এ নিয়ে দফায় দফায় অভিযান হলেও বিভিন্ন পণ্যের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। উল্টো রমজান শুরুর আগ মুহূর্তে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এলাচের দাম। এ ছাড়া চট্টগ্রামে এস আলমের সুগার মিলে আগ্নিকাণ্ডের পর খাতুনগঞ্জের চিনির দাম নিয়ে যেন শুরু হয়েছে ‘ছিনিমিনি’।

কিছুদিন ধরে দফায় দফায় অভিযানের পর ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতার পেছনে শীর্ষ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। সবশেষ গতকাল রোববার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চিনি ও এলাচের বাজারে লাগাম টানতে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অভিযানে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডিত তিনটি প্রতিষ্ঠানই খাতুনগঞ্জের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। যাদের বড় ভাই কিংবা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত। কোনো কোনো দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ইশারায় এখানকার পণ্যের দাম ওঠানামা করে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ এ বাজার ঘিরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী কালবেলাকে বলেন, আসলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সোজা কথায় মাফিয়া। মাঝেমধ্যে আমাদেরও জরিমানা করা হয়। আসল কথা হচ্ছে দামের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকে না। গতকালের অভিযানে আর এম এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলমগীর পারভেজ শীর্ষ এক ব্যবসায়ী নেতার ভাই। পাশাপাশি দেশের চিনির বাজারের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আলমগীর পারভেজ। একইভাবে চিনির ব্যবসা করা নাবিল গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বনামধন্য বড় একটি শিল্প গ্রুপের সহযোগিতায় ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে নানা কৌশলে। জেলা প্রশাসনের দণ্ডিত চিনি বিক্রয়কারী দুটি প্রতিষ্ঠানই বহু বছর ধরে খাতুনগঞ্জে ব্যবসা করছে। তবে অভিযানকালে তারা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ দেখাতে পারেননি।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে এলাচের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এ বি ট্রেডার্সকে অতিরিক্ত মূল্যে এলাচ বিক্রির দায়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক অমর দাশ প্রায় ৩০ বছর ধরে খাতুনগঞ্জে ব্যবসা করছেন। প্রতি কেজি এলাচের আমদানি মূল্য দেড় হাজার টাকার মতো। অথচ বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দরে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানায়, এ বি ট্রেডার্সের এলসি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি এলাচ আমদানি করতে আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচসহ ১ হাজার ৪৫০ টাকা পড়েছে। কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ লাভ করলে দাম ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। তবে ওই প্রতিষ্ঠানে এলাচ বিক্রি হচ্ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ বিষয়ে জানতে এ বি ট্রেডার্সের মালিক অমর দাশ এবং আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত অভিযান শেষে কালবেলাকে বলেন, কয়েকদিন আগে এস আলম সুগার মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে খুচরা বাজারে চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আসন্ন রমজানে যেন চিনির পাইকারি ও খুচরা বাজারÑ দুটিই স্থিতিশীল থাকে, সে লক্ষ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাচের বাজারেও অভিযান হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে রমজানের আগে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন প্রসিদ্ধ বাজারে সম্প্রতি একের পর এক অভিযানকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে বদলি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে, একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ এই বদলির হুমকি দিচ্ছে।