প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার মানবতার ফেরিওয়ালা নিজেই মাদকাসক্ত: ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ

মানবতার ফেরিওয়ালা নিজেই মাদকাসক্ত: ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ

অপরাধ: ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামে আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে পুলিশ অনেক ভয়াবহ-রোমহর্ষক তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গতকাল রোববার তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’আশ্রমে বর্তমানে ৪৫ জন শিশু আছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। পরে তাকে মানবপাচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে ডিবি পুলিশ। শুনানী শেষে মানব পাচার আইনে করা মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার মিল্টনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

ওই আদেশের এক দিন পর সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা যিনি কিনা নিজেই মাদকাসক্ত! অথচ মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন মানুষকে প্রতারিত করে বৃদ্ধ, অনাথ এবং যারা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন মানুষদের পুঁজি করে তিনি যে টাকা কামাচ্ছিলেন, এই টাকাগুলো তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই জমা হচ্ছিল। তিনি কিন্তু এসব টাকা ওই আশ্রিত মানুষের পেছনে খরচ করছিলেন না, চিকিৎসা দিচ্ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি, যা ভয়াবহ, লোমহর্ষক তথ্য। তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ না করে কিছু বলা ঠিক হবে না।’

তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা অনাথ শিশু, বৃদ্ধ, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আমাদের কাছে গতকাল এসেছিলেন। আমরা তাকে অনুরোধ করেছি। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমের পুরো দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। সব খরচ তিনি বহন করবেন। ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের আশ্রিত গরীব, অসহায় মানুষগুলোকে সেবা সেখানেই দেবে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন। আপাতত এটা চলবে। পরে অন্য চিন্তাভাবনা করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী এবং তিনি ইয়াবা সেবন করেন। নিজেই ইয়াবা সেবনের কথা স্বীকার করেছেন। তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা ছিল অমানবিক। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের এভাবে কেউ পেটাতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, তার আশ্রমে যারা মারা গেছেন, তাদের ডেথ সার্টিফিকেট নিজেই দিতেন, ডাক্তারের সিল স্বাক্ষর জালিয়াতি করতেন। তাদের কোথায় কবর দেওয়া হলো, সে তথ্য তিনি আস্তে আস্তে স্বীকার করা শুরু করেছেন। তদন্ত শেষ হলে এব্যাপারে জানানো হবে।

মিল্টন সমাদ্দারকে গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে আটক করে ডিবি। পরের দিন বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টনের সহযোগী কিশোর বালা নামে একজনকেও আসামি করা হয়। এ মামলায় ২ মে মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।