প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার মাদ্রাসার এতিমের খাবারেও ভাগ আ.লীগ নেতা খয়রাতের

মাদ্রাসার এতিমের খাবারেও ভাগ আ.লীগ নেতা খয়রাতের

অপরাধ: পায়জামা পাঞ্জাবি পরা এক কিশোর বাইসাইকেলে চড়ে আসছিলেন। তার পথরোধ করে দাঁড়ায় বিভিন্ন বয়সের কয়েকজন। সাইকেলে ঝোলানো টিফিন কেরিয়ার খুলে তারা খাবার দেখেন। এরপর তারা কিশোরের কাছে খাবারের গন্তব্য, কোথা থেকে এলো জানতে চায়। কিশোর জবাব দেয় সে যশোরের কারবালা পির নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া এতিমখানার শিক্ষার্থী। এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে।

ওই শিক্ষার্থী জানায়, এভাবে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা সভাপতির বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়। সোমবার রাতে এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের খাবার প্রতিদিন এভাবে সভাপতির বাড়িতে নেওয়া হয়। এ নিয়ে নানা পেশার মানুষ করছেন তীব্র সমালোচনাও।

জানা গেছে, যশোরের ঐতিহ্যবাহী এতিমখানা ও মাদ্রাসা কারবালা পির নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়ায় অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আংশিক অর্থায়নে ও জেলার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির টাকায় চলে এ প্রতিষ্ঠান। এটি পরিচালনার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য তিনজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থীর তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন ব্যর্ক্তি বিশেষ দিনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেন। সেই খাবারেই ভরসা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।

মাদ্রাসা সূত্রে ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসার সভাপতি খয়রাত হোসেনের তিনবেলা খাবারও যায় মাদ্রাসা থেকেই। দুপুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই তার বাড়িতে খাবার দিয়ে আসে। আর রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা সভাপতির বাড়িতে খাবার নিয়ে যান। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরেই এতিমদের খাবারে ভাগ বসিয়ে আসছেন খয়রাত হোসেন।

সোমবার নাজমুল হোসেন মিলন নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক থেকে সভাপতির বাড়িতে খাবার নেওয়ার ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত ৮৫ হাজার মানুষ দেখেছেন। এটি ডাউনলোড করে জেলার বিভিন্ন ব্যক্তি পোস্ট করে সমালোচনাও করেছেন।

ইউসুফ নামে একজন ব্যক্তি সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত চাচা পাঁচ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে। এক বেলায় যদি তিনি ৬০ টাকার খাবার খান, তাহলে তিনবেলা খেয়েছেন ১৮০ টাকা। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে তিনি তিন লাখ ২৪ হাজার টাকার খাবার খেয়েছেন। এতিমদের খাবার খেয়ে তিনি তাদের হক মেরেছেন। এই টাকা এতিমদের দিতে হবে।’

মাদ্রাসার সাংগঠনিক কমিটির এক নেতা জানান, ‘আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেন যশোরের বিশিষ্ট ও বিত্তশালী ব্যক্তি। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তিন মেয়েও উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। শহরে তার মার্কেট ও বাসা রয়েছে। এর পরেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে এতিমদের খাবার খাচ্ছেন। তার এ কাজ অত্যন্ত নিু মানসিকতার। একই সঙ্গে অন্যায়ও বটে।’

তবে মাদ্রাসার সুপার হাফেজ মো. মহিব উল্লাহ দাবি করেছেন, ‘সভাপতি সাহেব যশোরে সবসময় থাকেন না। তার স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়েরাও কাছে থাকেন না। যখনই তিনি যশোরে থাকেন, তখন মাঝে মধ্যে মাদ্রাসা থেকে খাবার যায়। ভাইরাল হওয়া খাবার এতিম শিশুদের জন্য পাঠিয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। ভালো মানের খাবার হওয়ায় টিফিন কেরিয়ারে সভাপতির জন্য পাঠানো হয়েছিল।’

অভিযোগের বিষয়ে খয়রাত হোসেন বলেন, ‘মাদ্রাসার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। আমারও মাদ্রাসা থেকে কিছু পাওয়ার হক রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ডায়বেটিস ও কিনডির রোগী। মাদ্রাসার খাবার খেলে আমি এতদিন বাঁচতাম না। আমি কখনো মাদ্রাসার খাবার খাইনি।’

সূত্র : যুগান্তর পত্রিকা

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।