প্রচ্ছদ সারাদেশ ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেমে পড়ে স্বামীকে তালাক, বিপাকে নারী চিকিৎসক

ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেমে পড়ে স্বামীকে তালাক, বিপাকে নারী চিকিৎসক

দেশজুড়ে: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেমে পড়ে স্বামীকে তালাক দেন বরিশালের নারী চিকিৎসক স্বপ্না আক্তার। কিছুদিন পর জানতে পারেন কথিত ওই চিকিৎসক সেজে তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

এ বিষয়ে স্বপ্না আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি শুধু আমার সাথে প্রতারণা করেননি, ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে পুরো এলাকা এবং দেশবাসীর সাথে প্রতারণা করেছে। ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে তিনি অনেক প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করেছেন। আমি চাই তাঁর বিচার হোক।’

জানা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সেনাবাহিনীর এক সৈনিককে ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করেন ডা. স্বপ্না আক্তার। কিন্তু বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতেই সৈনিক স্বামীকে রেখে জাকির হোসাইন নামের এক ঊর্ধ্বতন চিকিৎসকের প্রেমে পড়েন ডা. স্বপ্না আক্তার।

এ বিষয়ে ডা. স্বপ্না বলেন, ‘আমি যে ক্লিনিকে চাকরি করতাম, সেখানে তিনি আমার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে আসতেন। তিনি আমার জন্য বিভিন্ন খাবার-দাবার পাঠাতেন। তিনি আমাকে বারবার ফোন দিতেন। এতে একটা সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায়। এক পর্যায়ে এ সম্পর্ক আরও গভীর হয়।’

জানা গেছে, পরবর্তীতে সৈনিক স্বামীকে তালাক দিয়ে কথিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাকির হোসাইনের সাথে স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন ডা. স্বপ্না।

পরবর্তীতে জাকির হোসাইনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে তার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু তখনও তাদের বিয়ে হয়নি।

ডা. স্বপ্ন জানান, ‘আমাকে বিয়ে করবে, আমার সাথে তার এই ওয়াদা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর মতোই আমার সাথে ছিল।’

সম্পর্কের তিন মাস পর জাকিরের আচরণে ভিন্নতা দেখতে পেলে সন্দিহান হন ডা. স্বপ্না। সে সময় তিনি জানতে পারেন, অন্য এক নারীর সাথেও জাকির হোসেনের অবৈধ সম্পর্কের কথা।

এ বিষয়ে ডা. স্বপ্না বলেন, জাকিরকে আপত্তিকর অবস্থায় একবার গ্রামের লোকজন ধরেছিল। এরপর মোটা অংকের টাকা দিয়ে ওইখান থেকে নাকি পার পেয়ে আসছে।

জাকির হোসেনের নারী কেলেংকারী জানার পর ডা. স্বপ্না আক্তার জানতে পান, কথিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আসল নাম আরিফুল ইসলাম আরিফ। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। জাকির হোসাইন নামে এক চিকিৎসকের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি।

ডা. স্বপ্না বলেন, তার বাসা রাজধানীর বিজয়নগরে। কিন্তু সব মিথ্যা কথা বলতো। ওর বাসার পুরো ঠিকানা জানার জন্য আমি অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করি। ওর চেহারার সাথে যে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা ব্যবহার করতো, তার সাথে মিলে না। তখন জানতে পারলাম তিনি অন্য একজন চিকিৎসকের বিএমডিসি নম্বর ব্যবহার করছে।

বিষয়টি জানাজানির পর হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অন্যদিকে আসল পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর পলাতক রয়েছেন ভুয়া চিকিৎসক।

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলার সুইজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন না, তিনি বিভিন্ন জায়গায় চেম্বার করেন। একইভাবে এখানে শুক্রবার ও বুধবার চেম্বার করেন। তিনি আমাদের যেসব কাগজপত্র দিয়েছেন, তার কাছে জন্মনিবন্ধন-ভোটার আইডি কার্ড কাগজ চাওয়া হয়েছিল। দেবেন দেবে বলে দেননি।

এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা প্রমাণিত হলে সুইজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। তিনি বলেন, এসব অব্যবস্থাপনা আমরা তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মাঠ পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক মান আরও উন্নত করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে।

জানতে চাইলে বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সাইফুল হাসান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। সার্বিক বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’